রাত পোহালেই বাংলা নতুন বছর। তবে রাত শুরুর আগেই রঙ-তুলির আঁচড়ে রঙিন হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা প্রাঙ্গণ। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে লোকজ চিত্র, বাহারি মুখোশ। বন্দরনগরীতে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
করোনার ধকল কাটিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর আবারও বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ক্যাম্পাসে তাই উৎসবের আমেজ। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘শিল্পের প্রয়োজন, বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য।’
বাদশা মিয়া রোডসংলগ্ন চবির চারুকলা ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। মুখোশ আর ডামিতে রঙ-তুলির শেষ আচঁড় দিতে তারা ব্যস্ত। একান্নবর্তী (৫১তম) ব্যাচের তত্ত্বাবধানে দলে দলে ভাগ হয়ে ১২ দিন ধরে কাজ চলেছে দিন-রাত।
শেষ মুহূর্তেও রশিদ চৌধুরী গ্যালারিতে বসে রঙ-তুলিতে বাঘ, প্যাঁচা, সিংহ, পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ তৈরি ও সাজাতে দেখা গেছে। এবার মুখোশ তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাদের হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন একান্নবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ছিলেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও।
ফোক মোটিভ, প্রকৃতি, রিকশা পেইন্টিং, মাছ, পাখির আলপনায় বর্ণিল হয়ে উঠেছে অসংখ্য সরাচিত্র। কেউ এঁকেছেন পঠচিত্র।
রঙিন সরা, মুখোশ কেনার ব্যবস্থাও আছে। ৫০০ থেকে শুরু করে হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে মুখোশ। আর সরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। এর বাইরে বিভিন্ন পেইন্টিং ও পোর্ট্রেট কেনারও সুযোগ রয়েছে।
এবারের শোভাযাত্রায় ঘোড়া ও পাখির দুটি বড় মোটিফ (ডামি) থাকবে। ক্যাম্পাসের ভেতরে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই কাগজ, বাঁশ, কাঠ দিয়ে মোটিফগুলোর কাঠামো তৈরি করছেন। ডামি তৈরির কাজ শেষ। এখন চলছে রং ও কাজকে নিখুঁত করার পালা।
দেয়ালগুলোয় আঁকা হয়েছে লোকজ ম্যুরাল। গাজীর পট, মধুমনি ও যামিনী রায় ফোক বিষয়বস্তুকে মাথায় রেখে শিক্ষার্থীরা এসব ম্যুরালচিত্র এঁকেছেন।
আয়োজক কমিটির বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে বের হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাজীর দেউড়ি গিয়ে শেষ হবে।
একান্নবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থী সজিব কুমার দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ শুরু হয়েছে ২ এপ্রিল। আজ সন্ধ্যায় আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রার পর চারুকলা প্রাঙ্গণে গ্রামীণ খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ইফতারের আয়োজন করা হবে।’
তিনি জানান, করোনার জন্য এবারও কোনো পৃষ্ঠপোষক পাওয়া যায়নি। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে পাওয়া অর্থেই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘আমার কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, প্রক্টর, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে নিয়ে শোভাযাত্রা হবে। এবার থিম হিসেবে রাখা হয়েছে শিল্পী রশিদ চৌধুরীর শিল্পকর্ম। প্রতিপাদ্য হিসেবে আমরা রেখেছি শিল্পী রশিদ চৌধুরীর একটি লাইন- শিল্পের প্রয়োজন, বিবেকের জন্য, জীবনের জন্য।’
করোনার জন্য দুই বছর কোনো শোভাযাত্রা হয়নি জানিয়ে প্রণব মিত্র বলেন, ‘সে সময় ছাত্রছাত্রীরা মিলে শুধু ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আলপনা করেছিলাম। দীর্ঘদিন পর আগের অবস্থায় ফেরাটা আমাদের জন্য নব উদ্যম, নতুন আশা। জীবনকে নতুন করে দেখে দেশ ও সংস্কৃতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও থাকবে পয়লা বৈশাখের আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানান, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে র্যালি, গ্রামীণ-লোকজ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।