বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৈশাখ ঘোরাচ্ছে খেলনা গ্রামের চাকা

  •    
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:১৩

কারিগররা জানান, প্রতি ঘরে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি খেলনা তৈরি হয়। এক একটি টমটম তৈরিতে খরচ পড়ে ৬ টাকার মতো। পাইকারি হিসাবে ৮-১০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে মেলায় বা খুচরা হিসাবে প্রতিটি ১৫-২০ টাকা দরে হাতবদল হয়ে থাকে।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার ধাপেরহাট থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে খোলাস গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরেই তৈরি হয় শিশুদের খেলনা। এ কারণে স্থানীয়দের কাছে গ্রামটি পরিচিতি খেলনা গ্রাম হিসেবে।

নানা ধরনের খেলনার মধ্যে আবার টমটমের চাহিদা বেশি। বিভিন্ন মেলায় বছরজুড়েই চলে এর কেনাবেচা। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর খেলনা তৈরি প্রায় বন্ধ ছিল। এ বছর বৈশাখ ঘিরে ফের চাঙা হয়েছেন খেলনাশিল্পীরা।

টমটম তৈরি হয় মূলত ছোট ঠেলাগাড়ির আদলে। মাটির চাকার সঙ্গে বাঁশের লম্বা কাঠি বেঁধে দেয়া হয় গাড়ির কাঠামো। রঙিন কাগজে মুখ মুড়িয়ে মাঝ বরাবর বসানো হয় মাটির পাত্র। চাকা ঘুরলে বিশেষ কায়দায় বেঁধে রাখা দুটি কাঠির আঘাতে সৃষ্টি হয় টমটম শব্দ।

সরেজমিন মঙ্গলবার খেলনা গ্রাম ঘুরে কথা হয় কারিগরদের সঙ্গে। তারা জানান, গ্রামের অন্তত ১০০ ঘরে তৈরি হয় এই খেলনা।

গ্রামের বুলবুলি বেওয়া টমটম বানাতে শেখেন বাবার হাত ধরে। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, মামি আর মামাতো ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে মিলে তৈরি করেন টমটম। আর মামাতো ভাই সেগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন।

বুলবুলির মামি মালেকা বেগম বলেন, ‘বাঁশকাটি, বাটির মুখ বন্ধ করে বাঁশের সঙ্গে বাঁধি। তারপর চাকা লাগাই। বাড়ির বউ বাটিতে রঙ করে। তারপর না হয় টমটম।

‘খেলনা বানানোর মৌসুম মেলা দিয়ে শুরু হয়, দুর্গাপূজার থেকে শুরু হয়ে যা চলে রথযাত্রা মেলা পর্যন্ত।’

এ গ্রামে খেলনা তৈরির কাজটি নারীরাই করেন বেশি। পুরুষরা সেটি হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন।

কারিগররা জানান, প্রতি ঘরে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি খেলনা তৈরি হয়। এক একটি টমটম তৈরিতে খরচ পড়ে ৬ টাকার মতো। পাইকারি হিসাবে ৮-১০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে মেলায় বা খুচরা হিসাবে প্রতিটি ১৫-২০ টাকা দরে হাতবদল হয়ে থাকে।

টমটম ছাড়াও পাখিগাড়ি, কাঠের ট্রাক বানান কারিগররা।

খোলাস গ্রামে খেলনা তৈরি ঠিক কবে থেকে শুরু, তা জানা নেই কারও। তবে প্রবীণ কারিগর অবেদ আলীর মতে, পাকিস্তান আমলে এক ব্যক্তির হাত ধরে এই গ্রামে টমটমশিল্প শুরু হয়।

অবেদ বলেন, ‘৬০-৭০ বছর আগে পাকিস্তান আমলে কুড়ানু নামে এক লোক ছোটবেলায় হারিয়ে যান। তাকে খুঁজে পায় সৈয়দপুরের কয়েকজন বিহারি। তাদের কাছে থেকে টমটম খেলনা তৈরি করা শেখে কুড়ানু। বড় হয়ে সে খোলাস গ্রামে এসে টমটম খেলনা তৈরি করতে থাকে। তার কাছ থেকেই গ্রামের অন্যরা টমটম বানানো শেখে।’

আলাপের একপর্যায়ে যোগ দেন ৩১ বছরের জাফর আলী। বাবা কছিম উদ্দিনের হাত ধরে এ পেশায় যুক্ত হওয়া তার।

জাফর বলেন, ‘এবার মার্চে থেকে শুরু হয়েছে খেলনা তৈরির কাজ। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার পিস বানানো হয়েছে।

‘নিজে মেলায় নিয়ে গেলে আয় একটু বেশি হয়। দেশের যেখানে মেলা থাকে, সেখানে আমরা খেলনা নিয়ে যাই। এভাবে বছরে গড়ে ৫০ হাজার পিস খেলনা বিক্রি হয়। তবে গত দুই বছর তো কোনো খেলনা বানাতে পারিনি।’

জাফর জানান, সে সময় সংসার চালাতে গাছ কাটার কাজ করেন কিছুদিন। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ফের পারিবারিক পেশায় ফিরেছেন।

জাফরের মতোই করোনায় দুই বছর ফলের ব্যবসা করেন মো. ইনছান। তিনিও এ বছর খেলনার ব্যবসায় ফিরেছেন।

ইনছান জানান, তাদের বেশির ভাগ খেলনার ক্রেতা রাজধানীর। বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলেও খেলনা নিয়ে যান পাইকাররা।

খোলাস গ্রামে পাইকার টমটম ব্যবসায়ী আছেন ১০ জন। এ ছাড়া দুপচাঁচিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পাঁচজন ও ধাপেরহাটে একজনের দোকান আছে। এসব দোকানে অন্য জেলার ব্যবসায়ী খেলনা কিনতে আসেন।

ইনছান ও জাফর জানান, করোনার আগে প্রতি বছর গড়ে ৬০ হাজার পিস খেলনা বিক্রি করেছেন। আশা করছেন এবার বৈশাখী মেলায় ভালো লাভ পাবেন, ফের চাঙা হবে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প।

এ বিভাগের আরো খবর