উদ্বোধনের তিন দিনের মাথায় স্থানীয় তমছের বাহিনীর বাধায় বন্ধের মুখে বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাট নৌরুটের লঞ্চ চলাচল। তমছের বাহিনীর চাঁদা দাবি ও হুমকিতে বর্তমানে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে যমুনা পার হচ্ছেন। তবে যাত্রীদের নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৩৮ সালে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি পর্যন্ত ফেরি চলাচল চালু করেছিল ব্রিটিশ সরকার। নাব্য সংকটের কারণে ১৯৯০ সালে ফুলছড়িঘাট বালাসীতে স্থানান্তর করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ১৯৯৮ সালে চালু হয় যমুনা বহুমুখী সেতু। এরপর যাত্রীসংকট, নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন, নাব্য সংকটসহ নানা কারণে ২০০০ সালে বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর পর থেকেই নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দুই পারের ১০ জেলার মানুষকে।
এ অঞ্চলের মানুষের দাবির মুখে উভয় ঘাটে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় নৌ-টার্মিনাল। নদী খনন করে তৈরি করা হয় নৌ-চ্যানেলও। দীর্ঘ ২২ বছর পর গত ৯ এপ্রিল বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটের মধ্যে আবারও শুরু হয় পরীক্ষামূলক লঞ্চ চলাচল।
কিন্তু স্থানীয় তমছের বাহিনীর বাধার মুখে বিআইডব্লিউটিএর লঞ্চে যাতায়াত করতে পারছেন না যাত্রীরা।
লঞ্চচালকদের অভিযোগ, গত ১১ এপ্রিল বাহাদুরাবাদ ঘাটে তমছের বাহিনীর লোকজন লঞ্চচালক, কর্মচারীদের বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করে। আর যাত্রীদের তাদের নিজস্ব নৌকায় যেতে বাধ্য করে।
রিভার স্টার লঞ্চের ব্যবস্থাপক মো. রিপন বলেন, ‘সোমবার বিকেলে রিভার স্টার নিয়ে এখানে আসি। তখন তমছের মেম্বারের লোকজন আমাদের লঞ্চ থেকে লোকজনকে নামতে দিচ্ছিল না। হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল। এ ছাড়া আমাদের প্রত্যেক যাত্রীর জন্য ২০ টাকা করে দিতে হবে বলে জানিয়ে দেয় তারা।’
এমভি মুহাব্বত লঞ্চের ব্যবস্থাপক মুকুল বলেন, ‘সোমবার সকালে লঞ্চে যাত্রী তোলার সময় মেম্বার সাহেবের ছেলেসহ কিছু লোক আইসে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা এবং হুমকি দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে নেয়। এমনকি মহিলাদের কাপড় ধরে টানাহেঁচড়াও করেছে। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিলে তারা পালিয়ে যায়।’
রিভার স্টার লঞ্চের চালক বলেন, ‘মন্ত্রী আসার সময় অনেক যাত্রী হয়েছিল। হুমকির কারণে এখন যাত্রী হচ্ছে না। এভাবে লঞ্চ চলাচল করতে পারবে না। মালিকের পোষাবো না।’
বুধবার সকালে বাহাদুরাবাদ ঘাটে সরেজমিন দেখা যায়, ১৩৫ আসনের রিভার স্টার লঞ্চটি মাত্র ১৯ যাত্রী নিয়ে বালাসীঘাটের উদ্দেশে যাচ্ছে। এ সময় যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঘাটে এলে তমছের বাহিনীর লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়া ঘাটের বিভিন্ন পয়েন্ট যাত্রীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সমস্যার দ্রুত সমাধান করে নির্বিঘ্নে লঞ্চ চলাচলের দাবিও করেছেন তারা।
বালাসঘাটগামী যাত্রী আদম হোসেন বলেন, ‘এই ঘাটে একটা চক্র আছে। যারা চায় না এই রুটে লঞ্চ চলুক। তারা যাত্রীদের হয়রানি করছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। লঞ্চে উঠতে দিচ্ছে না। আমরা চাই এখানে লঞ্চ চলুক, যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারি। প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়া, এই চক্রটাকে এখান থেকে বিদায় করুক।’
মিনি বেগম নামে এক যাত্রী বলেন ‘নারীদের জন্য লঞ্চ খুবই সুবিধাজনক। কিন্তু হুমকির কারণে ভয় লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে এই রুট দিয়ে আমরা আর যাব না।’
তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে সাবেক ইউপি সদস্য তমছের বাহিনীর প্রধান তমছের আলী বলেন, ‘আমি বাধা দিই নাই। মিথ্যা কথা বলছে। এই ঘাটে নিয়মিত লঞ্চ চললে আমি সার্বিক সহযোগিতা করব। তবে আমি এখনও এই ঘাটের ইজারাদার। আমাকে টোল দিয়ে তারপর যাইতে হবে।’
এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মাননীয় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এই ঘাটে লঞ্চ উদ্বোধন করেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি যে নির্দেশনা আছে, তা বাস্তবায়নে আমরা সর্বদা সচেষ্ট। লঞ্চ চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে যে মাত্রার আইন প্রয়োগ করা দরকার আমরা সেই ব্যবস্থা নেব।’
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুন্নাহার শেফা বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর একজন পরিচালক এসে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি তাকে বলেছি, যখনই এ ধরনের সমস্যা হবে তারা যেন তৎক্ষণাৎ আমাকে বা ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানায়। আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’