‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ কে কঠিন আইন আখ্যা দিয়ে তা মানতে নারাজ জানিয়ে এ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও হোটেল মালিক সমিতির নেতারা।
ঠাকুরগাঁও শহরে মঙ্গলবার বিকেলে দুই হোটেলে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। নোংরা খাবার রাখার দায়ে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ আইনে দুই হোটেলকে তিন লাখ করে ছয় লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ওই দুই হোটেলের দুই ম্যানেজারকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।
এর প্রতিবাদে বুধবার দুপুর ১টায় শহর চৌরাস্তায় হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন ও মালিক সমিতি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা হোটেলের জরিমানা ও দণ্ড মওকুফসহ এই আইন বাতিলের দাবি তোলেন বক্তারা।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেই কর্মবিরতি ঘোষণা করে জেলার সকল হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বেকারি শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মালিক সমিতিও হোটেল অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ঠাকুরগাঁও হোটেল মালিক সমিতির উপদেষ্টা ও গাওসিয়া হোটেলের মালিক ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘আমার হোটেলে যখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়, তখন আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। শুধু আমার নামে মামলা হয়েছে বলে সাক্ষর নেয়। আমাকে সাক্ষরের আগে কতটাকা জরিমানা করা হচ্ছে, তা জানানো হয়নি। নিরাপদ খাদ্য পরিবেশন করি বলেই সারা দেশে হোটেল গাওসিয়া পরিচিত।
মঙ্গলবার যে দণ্ড দেয়া হয়েছে, তা অমানবিক মন্তব্য করে বলেন, ‘নিষ্ঠুর ও কঠিন আইন নিরাপদ খাদ্য আইন। আমরা এ আইন মানতে পারব না। কারণ, সারা মাসেও আমাদের তিন লাখ টাকা লাভ হয় না।’
সংগঠনের আরেক উপদেষ্টা নাজমুল হুদা শাহ্ এ্যাপোলো বলেন, ‘আইনের প্রতি আমরা সকলে শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু মানবতা বলেও একটা কথা আছে। করোনাতে এমনিতেই আমাদের নাকাল অবস্থা। তার উপরে জেল-জুলুম-জরিমানা হলে আমাদের ব্যবসা গুঁটিয়ে ফেলতে হবে।
‘মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করুন। ভেবে দেখুন ঠাকুরগাঁওয়ের মতো একটি ছোট্ট জেলায় যেখানে বছরে তিন লাখ টাকা লাভ করা যায় না। সেখানে তিন লাখ টাকা জরিমানা দেয়া কি করে সম্ভব। আমরা দণ্ড মওকুফ চাই এবং দণ্ডপ্রাপ্ত শ্রমিকদের মুক্তি চাই।’
হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘হোটেল মালিক না বাঁচলে আমরা বাঁচতে পারব না। আমরা গরীব মানুষ। রমজান মাস চলছে, সামনে ঈদ। হোটেল বন্ধ থাকলে এই ঈদে অভাবের তাড়নায় হয়তো অনেককে গলায় দড়ি দিতে হবে। আমরা হোটেলে কাজ করতে চাই। আমাদের উপর জেল-জুলুম ও জরিমানা বন্ধ করুন। আমাদের শ্রমিক ভাইদের মুক্তি দিন।’
হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অতুল পাল বলেন, ‘এই শহরে ছোট বড় অনেক হোটেল উদ্যোক্তা রয়েছে। যারা করোনাকালে লোকসান গুনেছে। না খেয়ে থেকেছে, হোটেল শ্রমিকদের খাবার যোগান দিয়েছে। কিন্তু আমরা মানবিক হলেও আমাদের মানবতাকে বেত্রাঘাত করছে নিরাপদ খাদ্য আইন। সামান্য ভুলেও এই আইনের প্রয়োগ হলে সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা জরিমানা হয়। আমরা আজ নিরুপায় হয়ে বলতে চাই ও দাবি জানাই এ আইন আমরা মানতে পারব না। এই আইন সংশোধন করুন।’
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে চিফ জুডিশিয়াল। এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে আমি জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনে হোটেল মালিকদের সঙ্গে ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করব।’