পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে এক পর্যায়ে সূচক আগের দিনের চেয়ে অনেকটা কমে গিয়েও শেষ পর্যন্ত কিছুটা বাড়ল। তবে এদিনও কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর, যে কারণে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতি আরও বেড়েছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সূচক কিছুটা বাড়লেও পরের দুই দিনে ৮৮ পয়েন্ট পতন, বিপুল সংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা না থাকা, শেয়ার বিক্রি করতে না পারার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে বুধবার লেনদেন শুরুর এক ঘণ্টা ২০ মিনিটে সূচক পড়ে যায় আরও ৫৯ পয়েন্ট।
আবার বড় দরপতন হয় কি না, এমন কথা বলাবলি হতে থাকে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত আর সেটি হয়নি। বড় মূলধনি কিছু কোম্পানি দর ফিরে পেতে থাকলে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ১০.৯০ পয়েন্ট বেড়ে শেষ করে লেনদেন।
এ নিয়ে রোজার ৯ কর্মদিবসে সূচক কমল ১৮৬.৯৪ পয়েন্ট।
বুধবার লেনদেন শুরু হওয়ার পর আগের দিনের মতোই টানা কমতে থাকে সূচক। তবে বেলা সাড়ে ১১টার পর সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার
বড় পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ালেও বেশিরভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মুখে হাসি নেই। কারণ ১৩০টি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৮৫টির দর। এছাড়া ৬৫টি কোম্পানি দর ধরে রাখতে পেরেছে।
আবারও বিপুল সংখ্যক কোম্পানির দর কমেছে পতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ পর্যন্ত। আবার এই সীমাতেও বিপুল সংখ্যক কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না।
যেসব কোম্পানির লেনদেন মঙ্গলবার বন্ধ ছিল রেকর্ড ডেটের জন্য, সেগুলোর দরও কমেছে সমন্বয়ের পর ২ শতাংশ। এই দরপতনের আসলে কোনো ব্যাখ্যা নেই।
এমনকি ভালো নগদ লভ্যাংশ দেয়ার পর রেকর্ড ডেট শেষে পরপর পাঁচ দিন ৩০ পয়সা করে কমেছে মার্কেন্টাইলে ব্যাংকের শেয়ারদর। ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর পাঁচ দিনে আরও দেড় টাকা দর কমায় বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ নিয়ে আসলে লোকসানে পড়েছে। কারণ তারা লভ্যাংশ পাবেন ১ টাকা ২৫ পয়সা, এখান থেকে আবার কর কাটবে ন্যূনতম ১২.৫ পয়সা (যাদের টিআইএন সার্টিফিকেট নেই, তাদের কাটবে ১৮.৭৫ পয়সা)।
লেনদেন আগের দিনের চেয়েও কমেছে। দিনশেষে হাতবদল হয়েছে ৫২৯ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন ছিল ৫৩২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২০২০ ও ২০২১ সালে পুঁজিবাজার চাঙাথাকাকালে এই পরিমাণ লেনদেন হতো এক ঘণ্টাতেই।
বৃহস্পতিবার পয়লা বৈশাখের সাধারণ ছুটিতে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকবে।
সূচক বাড়িয়েছে যারা
সূচকের বৃদ্ধিতে বেশি ভূমিকা রাখা শীর্ষ ১০টি কোম্পানির প্রথম দুটিই ওষুধ ও রসায়ন খাতের। সূচকে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস। কোম্পানিরটির ৪.৬১ শতাংশ দর বেড়েছে। আর এতে সূচক বেড়েছে ৩.৭৭ পয়েন্ট।
এরপরেই সূচক বাড়িয়েছে ওষুধ খাতের বড় মূলধনি কোম্পানি স্কয়ার ফার্মা। কোম্পানিটি সূচক বাড়িয়েছে ২.৯২ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১.১২ শতাংশ।
ওয়ালটন হাইটেকের দর ০.৫১ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বেড়েছে ২.২৩ পয়েন্ট।
এরপরেই ১.৬ পয়েন্ট বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। কোম্পানিটির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ।
প্রাইম ব্যাংকের ৪.৫৯ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে ১.৪৯ পয়েন্ট, ইবিএল ও বার্জার পেইন্ট ১ পয়েন্ট করে যোগ বাড়িয়েছে।
এছাড়া বিএসআরএম লিমিটেডের ১.৯৩ শতাংশ দরবৃদ্ধিতে ০.৮৩ পয়েন্ট, জেএমআই হসপিটালের ৯.৮৩ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে ০.৭৬ পয়েন্ট এবং এনসিসি ব্যাংকের ২.৭৬ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ০.৫৪ পয়েন্ট।
এই ১০ কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১৬.১৪ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি ১.৩৮ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি। কোম্পানিটির ১.২৮ শতাংশ দরপতনে এই পয়েন্ট কমেছে।
একই সমান সূচক পড়েছে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি রবির দরপতনে। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ০.৬৩ শতাংশ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ১.৩৪ পয়েন্ট কমেছে আইএফআইসি ব্যাংকের কারণে। দিন শেষে কোম্পানির দর কমেছে ৪.৬২ শতাংশ।
দর কমেছে বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি কোম্পানির। বেক্সিমকো ফার্মার ০.৯ শতাংশ দরপতনে ০.৮৮ পয়েন্ট এবং বেক্সিমকো লিমিটেডের ০.৪৮ শতাংশ দর পতনে সূচক কমেছে ০.৮১ পয়েন্ট।
এছাড়া তিতাস গ্যাসের ১.০১ শতাংশ দরপতনে ০.৫২ শতাংশ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ০.৯৪ শতাংশ দর কমায় ০.৫ পয়েন্ট, ব্যাংক এশিয়ার দর ১.৫৬ শতাংশ হ্রাসে ০.৪৬ পয়েন্ট, ডেল্টা লাইফের ১.৬৯ শতাংশ দর হ্রাসে ০.৪১ পয়েন্ট এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১.৯৯ শতাংশ দর পতনে সূচক হ্রাস পেয়েছে ০.৪১ পয়েন্ট।
অর্থাৎ এই ১০টি কোম্পানিই সূচক ফেলেছে ৮.০৯ পয়েন্ট ।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
টানা দর বেড়ে চলেছে জেএমআই হসপিটালের দর। লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ শতাংশ করে বেড়ে ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১ টাকা ৪০ পয়সায়।
এই কোম্পানিটি ছাড়া অন্য কোনোটির দর সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ছুঁতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.৮৬ শতাংশ বেড়েছে এইচআর টেক্সটাইলের দর। আগের দিন ৭৫ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৭৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের। ৫.৪৭ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিন সেটি হাতবদল হয়েছিল ৭ টাকা ৫০ পয়সায়।
এছাড়া বিকন ফার্মার ৪.৬ শতাংশ, সালভো সিমেন্ট ৩.৯১ শতাংশ, এমবি ফার্মা ৩.২৯ শতাংশ, রেনউইক জগেশ্বররের ৩.০৯ শতাংশ, ফার্স্ট প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩.০১, এবি ব্যাংকের ২.৮৩ শতাংশ এবং এনসিসি ব্যাংকের দর বেড়েছে ২.৭৫ শতাংশ।
দর পতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৪.৯৭ শতাংশ দর পতন হয়েছে তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের। কোম্পানির পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২১ সালের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানির করপোরেট ঘোষণার কারণে আজ দরপতন বা উত্থানে কোনো সার্কিট ব্রেকার ছিল না। এ কারণে ২ শতাংশের বেশি দাম কমার সুযোগ ছিল।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। ২০ মার্চে কোম্পানির পক্ষ থেকে ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার পরে দর সমন্বয় হয়েছে। রেকর্ড ডেটে দাম ছিল ১৩ টাকা। সমন্বয়ের পর দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা। এই দামেই হাতবদল হয়েছে শেয়ার।
ন্যাশনাল ফিডের দম কমেছে ২.৩১ শতাংশ। এই কোম্পানিটির এক শতাংশ লভ্যাংশ সমন্বয়ের পর এই পরিমাণ দাম কমেছে। আগের দিন দর ছিল ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। সমন্বয়ের পর হয় ১৭ টাকা ১০ পয়সা। সেখান থেকে ২০ পয়সা কমে হয়েছে ১৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
পিপলস ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ২ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৮ টাকা ৮০ পয়সায়।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারদর টানা পঞ্চম দিন দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিন দর ছিল ১৫ টাকা ১০ পয়সা। আজকে ১.৯৮ শতাংশ দর কমেছে লেনদেন হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
এছাড়া বিডিকম, হাওয়েল টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স, সমরিতা হসপিটাল ও আমরা টেকনোলজির দর কমেছে সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আশেপাশে।