অফ হোয়াইট রং, মোটা কাপড়। দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারে, কাপড়টা খাদি। এক সময় খাদি কাপড় শালেই বেশি ব্যবহার করা হলেও এখন ব্যবহারে এসেছে বৈচিত্র্য। খাদি কাপড় দিয়ে এখন তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবী, ফতুয়া, শার্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি এমনি বিছানার চাদরও।
উৎসব এলেই বিশেষ করে পয়লা বৈশাখের মতো বাঙালি উৎসবে খাদি কাপড়ের চাহিদা বাড়ে। এবার তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে খাদি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে খদ্দর মার্কেটের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো উৎসবে খাদি পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে। আর নববর্ষ পেরোলেই ঈদ। ফলে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে খাদির কদর বেড়েছে। খাদিতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ডিজাইন।
শিশুদের পছন্দের শীর্ষে আছে খাদি কাপড়ের ফতুয়া। তরুণদের মধ্যে এবার বেশি চলছে শর্ট পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। মেয়েদের শর্ট ফতুয়ার চাহিদা বেশি। পাশাপাশি রয়েছে থ্রিপিসের চাহিদাও।
এগুলোর পাশাপাশি খদ্দরের বাটিকের শাড়ি, বিছানার চাদর, জানালার পর্দার কাপড়ও ভালো বিক্রি হচ্ছে। অনেকে আবার পছন্দমতো বানানোর জন্য কিনছেন থানকাপড়।
বাগেরহাট স্টোরের খাদি কাপড় বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খাদি কাপড় চলে ভালো। বৈশাখ বা ঈদ না, সারা বছরই এই কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। খুচরা কাপড় বেশি বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা তেমন হচ্ছে না। মোটামুটি। এই কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি, শার্ট, জোব্বা তৈরি হয়। খাদি কাপড় দিয়ে মেয়েরাও পোশাক বানায়।’
ভাই ভাই ফ্যাব্রিক্সের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত দুই বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা ভালো। কুমিল্লা, নরসিংদী থেকে খাদি কাপড় কিনে আনি। গত দুই বছর তো বন্ধই ছিল। এবার বৈশাখের আগে বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে। সামনে ঈদ। বিক্রি আরও বাড়বে।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন তো খাদি কাপড়ে রঙ ও ডিজাইনের ভিন্নতা এসেছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে খাদির কদর বেড়েছে। মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তারা নিত্যনতুন ডিজাইনের খাদি কাপড়ের পোশাক বাজারে আনছে।’
খাদি কাপড় মূলত কুমিল্লার ঐতিহ্য। খাদি আর বাটিকের কাজ দুটোই বেশ জনপ্রিয়। চরকা ও হস্তচালিত তাঁতে বোনা হয় খাদি কাপড়। প্রায় সারা বছরই খাদির চাহিদা থাকে। তবে যে উৎসবে চাহিদা বেড়ে যায়। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় খাদি কাপড় আরও অনন্য হয়েছে।
দু’বছর করোনার মন্দার পর ঈদ ও পয়লা বৈশাখ ঘিরে বেড়েছে দেশি কাপড়ের চাহিদা। করোনার কারণে গত দুই বছর যে লোকসান হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা ফ্যাশন ও বুটিক হাউসগুলোর।
খাদি পাঞ্জাবি কিনতে আসা ফরিদুর রহমান বলেন, ‘খাদি কাপড় বেশ আরামদায়ক। আর এবার বৈশাখও গরম। এ জন্য আরামদায়ক হওয়ায় খাদি পাঞ্জাবি কিনছি। তবে অন্যবারের তুলনায় দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
খাদি কাপড়ের ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন জানান, সুতার মূল্যবৃদ্ধির কারণে বর্তমানে খাদি কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে।
খাদি শাড়ি কিনতে এসেছেন মাজেদা বেগম। তিনি বলেন, ‘খাদির শাড়ি দেখতে সুন্দর। এখন নতুন নতুন ডিজাইন যুক্ত করে শাড়িতে আনা হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। গরমে পরতেও আরামদায়ক। দামও নাগালের মধ্যে।’
বর্তমানে মার্কেটের খাদি দোকানে খাদির বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ঈদ ও নববর্ষ উপলক্ষ্যে খাদির পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার বেশ চাহিদাও রয়েছে। দামও নাগালের মধ্যে।
সাড়ে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় খাদির পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। ফতুয়া মিলবে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। মেয়েদের থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে শাড়ি। মেয়েদের শর্ট ফতুয়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।
তবে অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে থান কাপড়। পরিমাণমতো কিনে বানানো যায়। প্রতি গজ খাদি থান কাপড় ৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিছানার চাদর বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। লুঙ্গি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়।