ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বিক্রি হওয়া ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে বিভাগীয় শহরগুলো থেকে। নতুন করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না।
বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বুধবার ভোর ৬টা থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
খুলনা রেলওয়ের স্টেশনের মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বলেন, ‘রেলওয়ে রানিং স্টাফ কর্মচারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে ড্রাইভাররা ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সারা দেশেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। সমাধান হলে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’
সকালে স্টেশনে গিয়ে হতভম্ব হয়েছেন যাত্রীরা।
সাদিয়া ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সকাল থেকে স্টেশনে এসে বসি আছি। আমার যশোর যাওয়ার দরকার। শুনছি ট্রেন চলবে না।’
ঢাকাগামী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য চিত্রা এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলাম। আজ স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন চলছে না। টিকিট কী করব, আর ঢাকাই বা কী করে যাব, বুঝতে পারছি না।’
স্টেশনমাস্টার মানিক বলেন, ‘যেসব যাত্রী আগে টিকিট কেটে রেখেছিলেন, তাদের টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। নতুন করে টিকিট বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে। আশা করছি, দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হবে।’
রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে সকালে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় আছেন শ শ যাত্রী। কেউ প্ল্যাটফর্মে বসে আছেন, কেউ টিকিটের টাকা ফেরত নিতে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকে বিকল্প পরিবহনের খোঁজে ছুটছেন।
প্ল্যাটফর্মে বসে ছিলেন নাহিদ হোসেন। তিনি যাবেন ঢাকা।
তিনি বলেন, ‘আমি পার্বতীপুর যাব, সেখান থেকে ঢাকা। আমি তো জানি না যে ট্রেন বন্ধ। আপনার কাছে জানলাম। এখন কী হবে? সরকারি ট্রেনও ধর্মঘটে যায়?’
বৈশাখ উদযাপন করতে বাড়ি যাচ্ছিলেন রংপুরের ছাত্র আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘আমি লালমনিরহাটে যেতাম। কাল বৈশাখ, নিজ বাড়িতে করতাম। এসে শুনি ট্রেন যাবে না। আমরা ছাত্রমানুষ, সব সময় হিসাবের টাকা। এখন বাসে যেতে হবে।’
ঢাকাগামী মহসিন আলী বলেন, ‘যেহেতু যাওয়া হবে না, তাই টাকা ফেরত নিতে আসছি।’
রংপুর স্টেশনের সুপার শঙ্কর গাংগুলি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর স্টেশন থেকে ১২টি ট্রেন ছেড়ে যায়। এর মধ্যে খুব সকালে একটা গেছে, বাকি ১১টা যায়নি। যাত্রীরা টিকিটের টাকা ফেরত নিতে আসছেন। আমরা রিফান্ড করছি। কখন প্রত্যাহার হবে জানি না।’
সকাল সকাল স্টেশনে গিয়ে ট্রেন না পেয়ে ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের যাত্রীরাও।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী জানান, বুধবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছয়টি ট্রেনের শিডিউল ছিল। কোনোটিই ছেড়ে যায়নি।
টিকিটের টাকা ফেরত পেতে যাত্রীরা কাউন্টারগুলোতে জড়ো হয়েছেন সকাল থেকেই। বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, অনেকে আবার অপেক্ষায় আছেন, আশা করছেন দুপুর নাগাদ ট্রেন চলতে শুরু করবে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে কুমিল্লা যাওয়ার কথা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিমুল চৌধুরীর।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৩০০ টাকা খরচ করে এসেছি। শাটল ট্রেন না থাকায় বাধ্য হয়ে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে আসি। এমন বিপদে পড়ব জানা ছিল না।’
প্ল্যাটফর্মে স্ত্রী-সন্তানসহ ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা রফিক উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয় এক্সপ্রেসে ময়মনসিংহ যাওয়ার কথা, কিন্তু এসে দেখি ট্রেন চলছে না। কাউন্টার থেকে টিকিট ফেরত দিতে বলেছে। আবার কেউ কেউ বলছে দুপুরে ট্রেন ছাড়বে। তাই এখনও টিকিট ফেরত দিইনি। যদি আবার ট্রেন ছাড়ে।’
২ নম্বর কাউন্টারে টিকিট ফেরত দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন ইমতিয়াজ হাসান। তিনি বলেন, ‘এমন জানলে বাসে যেতাম। এখন টিকিট ফেরত দিয়ে বাসের টিকিট কাটব।’
স্টেশন ম্যানেজার রতন বলেন, ‘লোকো শেড থেকে ইঞ্জিন না আসায় কোনো ট্রেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী ট্রেন ছাড়ার এক ঘণ্টা আগেই প্ল্যাটফর্মে ইঞ্জিন চলে আসে। সকালে প্রথম ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন প্ল্যাটফর্মে না আসায় খবর নিয়ে জানতে পারি রানিং স্টাফরা ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে।
‘এ বিষয়ে সুরাহা করতে ঢাকার কমলাপুরে রেলমন্ত্রী, সচিব, ডিজি মিটিং করছেন শুনেছি। কোনো সিদ্ধান্ত এলে তখন ট্রেন চলতে পারে। তবে যেসব ট্রেন এখনও পর্যন্ত ছেড়ে যায়নি, যাত্রীরা চাইলে কাউন্টারে টিকিট ফেরত দিতে পারেন।’
রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ‘সারা দেশে চলাচল বন্ধ আছে। আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য রেখেছি।’
কী কারণে ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে জানতে চাইলে সাইদুর বলেন, ‘গত এপ্রিলে যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে, তাতে আমাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাড়ানো হয়নি।
‘এর আগে আমাদের এই দাবিটি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন সচিব মহোদয়। উনার কাছে আমরা লিখিত দাবি জানিয়েছিলাম।’