নোয়াখালী সদরের নেয়াজপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের শফি সর্দার বাড়ির শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক মোহাম্মদ রাজু মিয়া। জন্ম থেকেই পিঠে কুঁজ নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি, তবুও থেমে নেই জীবন। ঝুঁকি নিয়ে দৈনিক ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। রিকশার চাকা না ঘুরলে চলে না সংসার।
দিনমজুর বাবা শহিদ উল্লাহ, স্ত্রী রোকসানা ও তিন বছরের ছেলে ইব্রাহিম খলিলকে নিয়ে রাজুর সংসার। বাবা-মার একমাত্র সন্তান তিনি। অভাবের কারণে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার পর আর স্কুলের গণ্ডিতে পা দিতে পারেননি। আট বছর বয়সে শুরু করেন মাছ বিক্রি। এরপর জেলা শহর মাইজদীতে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন।
তবে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী হলেও রাজুর কপালে জোটেনি সরকারি কোনো সহযোগিতা। কোনো ধরনের ভাতা পাননি তিনি। তাই আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘ভাতা সুস্থ ও বড়লোকেরা পায়।’
রাজু বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই পিঠে কুঁজ থাকায় খুবই কষ্টে চলাফেরা করি। রিকশা চালিয়ে মালিকের জমার টাকা দেয়ার পর দুই-তিন শ টাকা থাকে। এ টাকায় সংসার চলে না। আমার একটি রিকশা থাকলেও ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতাম।’
জীবনযুদ্ধে ব্যস্ত রাজুর ঈদের দিন কাটে পুরোনো কাপড় পরেই। ছেলে বা স্ত্রীকেও নতুন কিছু দিতে না পারায় ঈদের আনন্দ ম্লান তার কাছে।
ছেলে ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে রাজু মিয়া। ছবি: নিউজবাংলা
ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে ১২০০ টাকা জমা দিয়েও পাইনি প্রতিবন্ধী ভাতা। ডিসি অফিস ও উপজেলা অফিসে কাগজ জমা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ধনী ও শারীরিক সামর্থ যাদের ভালো তারা ভাতা পান। আমি গরীব, তাই পাই না। দশ টাকা কেজির চালের কার্ডও পাই না।’
রাজুর বাবা শহিদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই রাজুর অসুস্থতা দেখা দেয়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। এখন স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন পার হয় ওর। আমার কিছু হয়ে গেলে ওদের আর কোনো অবলম্বন থাকবে না।’
রাজুর চাচা মোহাম্মদ বাবুল বলেন, ‘এ অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে কিছু সাহায্য পেলে রাজু ভালোভাবে জীবনটা কাটাতে পারত।’
নেয়াজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন বাহাদুর ওমরাহ হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ইউনিয়ন পরিষদের সচিব জানান, মোবাইলে হিসাব খোলার জটিলতার কারণে রাজু এখনও ভাতার টাকা পায়নি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজুর বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধা দেয়া হবে। রাজুর কর্মসংস্থানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’