করোনা মহামারিতে গত দুই বছর পহেলা বৈশাখে ঘরবন্দি ছিল মানুষ। নতুন বছরকে বরণ করতে ছিল না কোনো আয়োজন।
এবার নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা, উৎকণ্ঠা; করোনার প্রকোপও অনেকটা কমেছে। তাই বর্ষবরণে সিলেটে ফিরেছে উৎসবের আমেজ।
বৃহস্পতিবার বরণ করা হবে বাংলা নতুন বছর ১৪২৯-কে। সে জন্য শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আয়োজকরা। এবার রমজানের কারণে কমিয়ে আনা হয়েছে আয়োজনের সময়। দুপুরের মধ্যেই শেষ হবে সব অনুষ্ঠান।
আয়োজন সীমিত হলেও উৎসব ফিরে আসায় উচ্ছ্বসিত সংস্কৃতিকর্মীরা।
জেলা শহরে পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করবে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শোভাযাত্রাটি রিকাবীবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামের মুক্তমঞ্চে গিয়ে শেষ হবে।
এই আয়োজনের সহযোগিতায় থাকছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি।
শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্ত জানান, মঙ্গল শোভাযাত্রার পর নজরুল ইসলাম একাডেমির মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে থাকছে বাউলগান, কাঠি ও ঝুমুর নৃত্য, মণিপুরি নৃত্য, লোকগান ও দেশের গান।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এবার করোনা মহামারির প্রকোপ অনেকটা কমে এসেছে, তাই পহেলা বৈশাখ পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ বছর পবিত্র রমজান মাস চলমান থাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের সময় কমিয়ে আনা হয়েছে।’
পহেলা বৈশাখের আয়োজনের সঙ্গে সিলেটে আনন্দলোক সংগঠনটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নগরের শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ মাঠে তাদের উৎসবের আয়োজন রাখা হয়েছে।
আনন্দলোকের পরিচালক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিনহা বলেন, ‘গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বৈশাখী উৎসব হয়নি। এবার পরিস্থিতি একটু উন্নতি হয়েছে। তাই সীমিত আকারে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা হবে।’
তিনি জানান, আনন্দলোকের উদ্যোগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠানমালা। এতে আনন্দলোকের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত-নৃত্য-আবৃত্তি পরিবেশন করবে।
সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শ্রুতি’ নগরীর ব্লু-বার্ড স্কুল মাঠে রেখেছে তাদের বর্ষবরণের আয়োজন।
‘ফিরে চল মাটির টানে’ এমন আহ্বানে তাদের অনুষ্ঠান চলবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
সংগঠনটির সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত বলেন, ‘রমজান মাসের কারণে এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়েছে। এ বছর স্বল্প পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও মেলার আয়োজন এবার থাকছে না।’
দুই বছরের বিরতি শেষে বর্ষবিদায়ে বুধবার নানা আয়োজন রেখেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। তাদের আয়োজন হবে বিকেলে নগরের চাঁদনীঘাটে। পরদিন তারা পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘মহামারির কারণে গত দুই বছর বর্ষবরণের কোনো আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এবার বর্ষবরণে সেই প্রতিবন্ধকতা নেই। তাই এবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হবে। একই সঙ্গে যাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি ব্যাহত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হবে।’
এ ছাড়া নাট্যসংগঠন একদল ফিনিক্স, কথাকলি ও উদীচীরও আছে বর্ষবরণে আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন।
বর্ষবরণের আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে নগরে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফউল্লাহ তাহের।
তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে, সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে কাজ করবে। এ ছাড়া সাদা পোশাকে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ থাকবে।
‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য। এ উৎসবকে ঘিরে যাতে কোনো রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সজাগ থাকবে পুলিশ। এ ছাড়া এবার যেহেতু রমজান মাস, তাই রমজানের পবিত্রতা যাতে নষ্ট না হয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকবে।’