নওগাঁর মহাদেবপুরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে এক পোশাকশ্রমিকের গর্ভপাত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মহাদেবপুরে নওহাটা ফাঁড়ির দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আর গর্ভপাতের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী।
ওই নারীর বাড়ি সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নের কুরমইর গ্রামে। ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় তিনি কাজ করেন। তার স্বামী বায়োজিদ চৌধুরীর বাড়ি মহাবেদপুরের শরিফপুর গ্রামে। ঢাকায় তিনি রডের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন।
পোশাকশ্রমিক জানান, ২০১৬ সালে ঢাকায় পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরিবারকে না জানিয়ে তারা ২০২০ সালে বিয়ে করেন। পরে মেয়ের পরিবারকে বিষয়টি জানানো হলে তারা মেনে নেন। তবে বায়োজিদ তার পরিবারের কাছে বিয়ের কথা গোপন রাখেন। এরই মধ্যে ৫ মাস আগে গর্ভবতী হন ওই নারী।
তার অভিযোগ, বায়োজিদ তার বাড়িতে যাওয়ার পর গত তিন মাস ধরে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। তার খরচ দেয়া বন্ধ করে দেন। পরে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, স্বামী বাড়ি গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করতে তিনি মহাদেবপুরে স্বামীর বাড়ি যান গত শুক্রবার। সেখানে বায়োজিদের স্ত্রী হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিলে বায়োজিদের চাচা কুদ্দুস চৌধুরী ও চাচাতো ভাই নাজমুল চৌধুরী তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে ওই নারীর স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেন।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ মঙ্গলবার বলেন, ‘মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে। এখনও তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আঘাতের কারণে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে।’
পোশাকশ্রমিকের মা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। স্বামী দীর্ঘদিন থেকে হার্টের রোগী ও লিভারজনিত সমস্যায় ভুগছে। চার ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়েটা তৃতীয়। মেয়ে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। এখন দেখছি মরতে বসেছে। মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই। সেই সঙ্গে তার স্বামীর স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বায়োজিদ ও তার চাচাতো ভাই নাজমুলকে কল করা হলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বায়োজিদের বাবা খইবর চৌধুরী বলেন, ‘এক বছর আগে ছেলে বিয়ে করেছে, এ কথা আমি জানতাম না। তবে কিছুদিন আগে আমার ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। ৪-৫ দিন আগে ওই মেয়ে আমার বাড়ি এসে বলে যে আমার ছেলে তাকে বিয়ে করেছে। সেদিন আমার ছেলে বাড়ি ছিল না। এ ছাড়া তাকে কোনো ধরনের মারপিট করা হয়নি।’
নওহাটা ফাঁড়ির এসআই জিয়াউর বলেন, ‘ওই নারীকে স্ত্রী হিসেবে ছেলেপক্ষের কেউ মেনে নিত না। ছেলের পরিবার বিভিন্নভাবে তালবাহনা করত। হঠাৎ করে মেয়ে জানতে পারে তার স্বামী নতুন করে আরেকটি বিয়ে করেছে।
‘বিয়ের পর তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ফাঁড়িতে অভিযোগ দেয়। এরপর ঘটনাস্থলে তদন্তে যাওয়া হয়। মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে শুনেছি। নির্যাতনে তার গর্ভের বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেছে। তবে নির্যাতনে বাচ্চা নষ্টের বিষয়টি অভিযোগপত্রে উল্লেখ ছিল না। হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসা হয়েছে, বিষয়টি গুরুতর। আমরা চেষ্টা করছি অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নিতে।’