করোনা পরিস্থিতিতে গেল দুই বছর টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লি ছিল ঝিমিয়ে। বন্ধ ছিল বেশির ভাগ তাঁত। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর মালিক-শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ করছেন।
পয়লা বৈশাখে এই তাঁতপল্লির চাহিদা অন্য সময় থাকে তুঙ্গে। তবে এবার রোজায় পয়লা বৈশাখ বলে সেখানকার বেচাকেনা কম। তারপরও ঈদ সামনে রেখে বিরামহীন চলছে কাপড় বোনা।
মঙ্গলবার তাঁতপল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেই চিরচেনা দৃশ্য। তাঁতের খটখট শব্দে মুখর চারপাশ। শ্রমিকরা চাহিদামতো শাড়ি তৈরিতে মগ্ন।
মো. রফিকুল নামে এক তাঁতশ্রমিক বলেন, ‘গত দুবছর অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হয়েছে। এবার কাজ করছি লাগাতার। আসছে ঈদ পরিবারের সঙ্গে ভালোভাবে করতে পারব আশা করি।’
তাঁতশ্রমিক মো. সাহিদুল জানান, ‘গত দুবছরে যে লোকসান হয়েছে মহাজনের, সেই লোকসান কিছুটা হলেও এবার সামলিয়ে উঠতে পারবে। এখন দিনরাত কাজ করছি। খুবই কাজের চাপ।’
তাঁতমালিকরা বলছেন, দুই বছরের লোকসান গুনতে গিয়ে পুঁজির সংকটও দেখা দিয়েছে। এসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পয়লা বৈশাখ ও ঈদের জন্য দিনরাত শ্রম দিচ্ছেন।
তাঁতমালিক মকবুল হোসেন বলেন, ‘করোনায় যে লোকসান হয়েছে তা ওঠানো সম্ভব না। এবার পয়লা বৈশাখে তেমন বেশি কাপড় বেচাকেনা না হলেও ঈদ উপলক্ষে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
আরেক তাঁতমালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার বৈশাখ উপলক্ষে পলিস্টার সুতা, কটন সুতা, ইজিপসিয়ান কটনের নতুন নতুন শাড়ি এনেছি বাজারে। তারপরও তেমন বাজার দাম পাচ্ছি না। তবে ঈদ উপলক্ষে বাজার দাম ভালোই পাচ্ছি। আগে যে কাপড়ের পেটি ৪ হাজার টাকা বিক্রি করতাম, সেই পেটি এখন ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। আশা করছি ভালো হবে।’
করটিয়া হাটের মাধবদী শাড়ী ঘরের মালিক কুশী সাহা বলেন, ‘নতুন নতুন কাপড় এনেছি মার্কেটে। তাও তেমন সাড়া পাচ্ছি না। তবে ঈদের বাজার ভালো। রেশম ও গ্যাস কাপড়গুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
মো. শুভ নামে পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘মাসলাইট সুতা, মাস্তানো সুতা, হাইবিট টিস্যু দিয়ে নতুন নতুন কালেকশন এনেছি। তারপরও যে রকম আশাবাদী ছিলাম যে বৈশাখে বেচাকেনা হবে, সে পরিমাণ হচ্ছে না। তবে সামনে ঈদ উপলক্ষে মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।’
রংপুর থেকে শাড়ি কিনতে তাঁতপল্লি গিয়েছেন মো. তানভীর। তিনি বলেন, ‘যে কাপড় আগে ৪ হাজার টাকায় নিতাম, সেই কাপড় এখন ৫ হাজার টাকায় নিতে হচ্ছে। কাপড়ের দাম বেশ কিছুটা বেড়ে গেছে। তাই সামনে ঈদে পাইকার ও আমাদের ভালোই কামাই রুজি হবে আশা করছি।’
ঢাকা থেকে যাওয়া নাজমুল ব্যাপারী বলেন, ‘এবার হাটে রংধনু শাড়ি ও চুমকী শাড়ি বৈশাখ উপলক্ষে ভালো চলতেছে। গত সপ্তাহে এই শাড়িগুলো ঢাকাতে নিয়েছিলাম। সব শেষ হয়ে গেছে। বৈশাখের আছে দুদিন, তাও আজকে নিয়ে যাচ্ছি।’
টাঙ্গাইলের পাথরাইল তাঁত শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ‘দীর্ঘদিনের যে মন্দাবস্থা, তা কাটিয়ে তুলে ঈদ ও পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্প আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সামনের দিনগুলো এভাবেই যেন থাকে।’