টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি গত বছরের ১৩ এপ্রিল ঘোষণা করা হয়। যেখানে সভাপতি করা হয় সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় নুরুল মোস্তফা নামে একজনকে।
এ কমিটি ঘোষণার পরে জানা যায়, সাধারণ সম্পাদক আগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলে তাও দেয়া হয়নি। এতে পদবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় নেতা-কর্মীর অভিযোগ, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের প্রশ্রয়ে নুরুল মোস্তফা ছাত্রলীগে যুক্ত হয়েছে। তার বলয়ে থাকতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগ উঠেছে অনেক আগেই। একের পর এক অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থায় নেয়নি জেলা ছাত্রলীগ।
কমিটি ঘোষণার পর থেকে নুরুল মোস্তফা জড়ান নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও বিএনপির নেতা কর্মীদের সঙ্গে নুরুল মোস্তফার সৌজন্য সাক্ষাতের কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
সেই বিতর্কের শেষ না হতেই নতুন বিতর্কের জন্ম দেন নুরুল।
গত ৮ এপ্রিল কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফাসহ ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
১০ এপ্রিল হ্নীলার মৌলভীবাজার নাইক্ষংখালী এলাকার বেলাল উদ্দীন মামলাটি করেন। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় লাঠি, দা ও ছুরি নিয়ে বাদীর ভাতিজা সাইফুল ইসলামের ওপর হামলা চালান আসামিরা। ভাতিজাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে বেলাল উদ্দীনকেও মারধর করা হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। একই সময়ে আসামিরা ইট-পাটকেল ছুড়ে স্থানীয় মসজিদের জানালাসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালান। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীর ওপর হামলা করা হয়। যার নেতৃত্ব দেন নুরুল মোস্তফা।
ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এজাহারটি প্রাথমিক তদন্ত করে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার বিষয়ে জানতে টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোস্তফাকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
তবে সংঘর্ষের পর তিনি বলেছিলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশসহ আমরা সবাই মিলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছি। উভয় পক্ষের লোকজন আমার পরিচিত ছিলেন। এ সময় কয়েকজন আহত হন।’
ছাত্রদলের রাজনীতির বিষয়ে জানতে চাইলে নূরুল মোস্তফা ছবিগুলোকে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের বলে দাবি করেন।
কক্সবাজার ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সায়েদ আমিন নিশান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জীবনে কখনও ছাত্রলীগ করেনি, হঠাৎ ছাত্রদল থেকে এসে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছে। পদবি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিতর্কিত কাজ করে ছাত্রলীগের মানসম্মান ক্ষুণ্ন করছে নুরুল মোস্তফা। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানান, নুরুলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত করা হোক। তদন্তে এসব অভিযোগ ভুল প্রমাণিত হলে তাকে অভিনন্দন। যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হোক।
কক্সবাজার ছাত্রলীগের সহসভাপতি মঈন উদ্দিন বলেন, ‘বার বার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন নুরল মোস্তফা। এটি ছাত্রলীগের জন্য সুখকর নয়। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক তার বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেবেন।’
ব্যবস্থা নেয়ার মতো কিছুই হয়নি বলে সব অভিযোগ উড়িয়ে দেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে শুনার পর ওসির কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছি। তিনি বিষয়টি তদন্ত করছে। অভ্যন্তরীন কোন্দলে নুরুল মোস্তফাকে আসামি করা হয়েছে।’
কমিটি এক বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার কথা ছিল, তা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে সম্পর্কে মারুফ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া সম্ভব হয়নি।’
বিতর্কিত নুরুল মোস্তফা আগে টেকনাফ উপজেলা বা জেলা ছাত্রলীগের কোনো সদস্য বা পদে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি (নুরুল) কোনো কমিটিতে ছিলেন না। তার বয়স তখন খুব কম। তিনি একজন ত্যাগী কর্মী। টেকনাফে মাদক কারবারিদের মন মতো কমিটি না পাওয়ায় বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে তারা।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা জেলার নেতৃবৃন্দ বসে একটি সিদ্ধান্ত দ্রুত পৌঁছাব।’