এক লাফে লিটারে ১৩ টাকা বেড়ে উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল জেট ফুয়েলের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। এতে ঈদে বাড়ি ফিরতে বাড়তি ভাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এভিয়েশনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি ফ্লাইটের পরিচালনা ব্যয়ের অন্তত ৪০ ভাগ নির্ভর করে জেট ফুয়েলের দামের ওপর। তাই জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধি পেলে সরাসরি প্রভাব পড়ে ভাড়ায়।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি লিটার ফুয়েলের দাম গত ৩ মাসেই ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরপর তো আর কিছু বলার নেই। গত ১৮ মাসে ১২০ শতাংশ দাম বেড়েছে।’
এতে ভাড়ায় কী প্রভাব পড়বে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার প্রভাব পড়বে ভাড়ায়। সর্বশেষ যশোর ও বরিশালে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৪ হাজার ৩০০ টাকা। এটা এখন হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। …চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে ভাড়া হয়েছে সর্বনিম্ন ৫ হাজার।’
তিনি বলেন, ‘কোভিডের আগে সৈয়দপুরে ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ২ হাজার ৭০০ টাকা। সে সময় জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৪০ টাকার কম। সেখানে এখন প্রতি লিটার তেলের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। এর ফলে ভাড়াও বেড়েছে ২ হাজার টাকার বেশি।
‘এভিয়েশনশিল্প আর পর্যটনশিল্পকে যদি সাধ্যের মধ্যে রাখতে হয়, তাহলে জেট ফুয়েলে সাবসিডি দেয়ার সুযোগ থাকলে যেন এটাকে তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়। এটা না হলে বিদেশি এয়ারলাইনসের সাথে প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারব না।’
এভিয়েশন অপারেটস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এবং এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের সময় টিকিটের এমনিতেই একটি ক্রাইসিস থাকে। এর কারণে এমনিতেই টিকিটের দামটাও বেশি থাকে। স্বাভাবিকভাবেই এটা এখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করবে।’
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে দেখা যায় দিনে ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী যাওয়া-আসা করেন। ঈদের সময়ে এটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ সময় প্রত্যেকটা এয়ারলাইনসই বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজারের মতো যায়।
‘ফুয়েলের দাম বাড়লে তো ফ্লাইটের ভাড়া বাড়বে। এতে দীর্ঘমেয়াদে শিল্পের ওপর প্রভাব পড়বে। এটা অবশ্য বিশ্ববাজারেই তেলের দাম বাড়ছে।’
দাম যেভাবে বাড়ছে
জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা, মার্চে তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা। এপ্রিলে তা ছিল ৬১ টাকা।
মে মাসে এক টাকা কমে দাম। এরপর আবার দাম বাড়ে। জুনে তা হয় ৬৩ টাকা, জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০, নভেম্বরে ৭৭ টাকায় পৌঁছে দাম।
এরপর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ২ টাকা করে কমলেও ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ৭ টাকা করে বেড়ে হয় ৮৭ টাকা। এপ্রিল মাসে বাড়ানো হয় ১৩ টাকা।
অভ্যন্তরীণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্যও বেড়েছে জেট ফুয়েলের দাম। এখন থেকে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল কিনতে হবে ১ দশমিক ০২ ডলার বা ৮৮ টাকায়।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫০ সেন্ট (৪২ টাকা), মার্চে ৫৫ সেন্ট (৪৬ দশমিক ৭৫ টাকা), মে মাসে ৫৬ সেন্ট (৪৭ দশমিক ৬ টাকা), জুনে ৫৯ সেন্ট (৫০ দশমিক ১৬ টাকা), জুলাইয়ে ৬২ সেন্ট (৫২ দশমিক ৭ টাকা), আগস্টে ৬৩ সেন্ট (৫৩ দশমিক ৫৫ টাকা), অক্টোবরে ৬৫ সেন্ট (৫৫ দশমিক ২৫ টাকা) এবং নভেম্বরে ৭৩ সেন্ট (৬২ দশমিক ০৫ টাকা)।
এ বছরের জানুয়ারিতে পদ্মা অয়েল প্রতি লিটার জেট ফুয়েল ৬৭ সেন্ট বা ৫৭ টাকায় সরবরাহ করেছে এয়ারলাইনসগুলোকে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৫ সেন্ট বা ৬৪ টাকা।