কিশোরগঞ্জ শহরের বুক চিড়ে বয়ে চলা নরসুন্দা নদ খননেও পানি প্রবাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা জলে গেছে। পরিবেশ বিষয়ক একটি সংগঠন অভিযোগ করেছে, নদী পুনর্খনন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) অনুযায়ী কাজ না করায় প্রকল্পটি নদীর প্রাণ ফেরাতে পারেনি।
মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে কিশোরগঞ্জ নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের আহবায়ক শেখ সেলিম কবির বলেন, ‘প্রকল্প শহরবাসীর জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।’
‘নরসুন্দা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে’ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ সোচ্চার ছিল। ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি ইসলামিয়া সুপার মার্কেট চত্বরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।
‘আর এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চারজন সচিবের উপস্থিতিতে গণশুনানি হয়। পরে তদন্ত কমিটিও করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি।’
২০১২ সালে নদীর ৩৫ কিলোমিটার পুনর্খননের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু ১১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার এ কাজে নদীতে পানি আসেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২০ সালে বলে, প্রাথমিক পর্যায়ে খননের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে আগামী বছর। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও ৪৮ কিলোমিটার খনন করা হলে পানি আসবে নদে।
তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সেই খনন আর দেখেনি শহরবাসী। এতে শহরে কয়েকটি সেতু ও নদীতীরে দৃষ্টিনন্দন হাঁটার এলাকা ও উন্মুক্ত মঞ্চ ছাড়া বিপুল খরচের আর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় গত সোমবার নরসুন্দা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলা প্রশাসক, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে আইনি নোটিশ দেয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়নি। উপরন্তু নতুন নতুন অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে।
নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উদ্যোগ না নিলে ঈদের পর আন্দোলন ও আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী শেখ হাবিবুল্লাহ টিটু ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবি জানান।
এ সময় সুরক্ষা মঞ্চের পক্ষে সেলিম জাবেদ তিতাস, মুকসুদ আলী, এনামুল হক কামরুল, রফিকুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।