বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকায় ব্যয় ৪০ হাজার নয়, ১৮ হাজার কোটি: টিআইবি

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:২৭

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন টিকায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।…সরকার নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করছে না। তাদের প্রকাশিত তথ্য পরিমাপ করে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে ১৪ হাজার কোটি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।’

সরকারের পক্ষ থেকে করোনার টিকার পেছনে মোট খরচ ৪০ হাজার কোটি টাকা জানানো হলেও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি বলছে, পূর্ণাঙ্গ খরচ প্রকাশ না করায় এই বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে।

তাদের হিসাবে এই খাতে ব্যয় হতে পারে ১৪ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য এই সংস্থাটিও এই ধারণার পেছনে তাদের পূর্ণাঙ্গ কোনো হিসাব জমা দেয়নি।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে। তবে সামগ্রিকভাবে টিকা কার্যক্রমে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।

মঙ্গলবার টিআইবি আয়োজিত ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন টিকায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।…সরকার নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করছে না। তাদের প্রকাশিত তথ্য পরিমাপ করে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে ১৪ হাজার কোটি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।’

এই তারতম্যের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রকাশের ঘাটতি, গোপনীয়তার সংস্কৃতি’র কথা।

টিআইবির প্রধান বলেন, ‘টিকা কার্যক্রমে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোটাদাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন। কিন্তু তার সেই বক্তব্য নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণমূলক তথ্য প্রকাশ হয়নি।’

অবশ্য টিকার পেছনে ১৪ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে- এমন ধারণা করার বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি।

করোনার টিকা যখন ভারতীয় কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা হয়, তখন সরকার তার ব্যয় প্রকাশ করেছিল। পরে এই কোম্পানিটি যখন টিকা সরবরাহে সফল হয়নি, তখন সরকার চুক্তি করে চীনের সঙ্গে।

প্রথমে জানানো হয়, চীনের টিকার দাম পড়ে সিরামের টিকার দ্বিগুণেরও বেশি, ১০ ডলার। তবে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর চীন টিকা চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়। কারণ, তারা অন্যান্য দেশে আরও বেশি দামে টিকা বিক্রি করেছে, বাংলাদেশকে তারা বিশেষ ছাড় দেয়।

পরে টিকা কেনায় কত টাকা ব্যয়- এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য চীনের কাছ থেকে টিকা আসার পর বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে ভর্তুকি মূল্যে সরকার কোটি কোটি টিকা পেয়েছে। তবে টিকাপ্রতি ব্যয় কত, সেটি আর জানানো হয়নি।

চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার সময় দাম ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারায় সে সময় সরকারের সমালোচনাও হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান এখন বলছেন, ‘তথ্য প্রকাশ করা যাবে না বলে টিকা ক্রয়ের চুক্তিতে যা বলা হয়েছে সেটা যৌক্তিক নয়। তবে এর বাইরে থেকেও যেসব জায়গা থেকে টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে তার তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।’

টিকায় বৈষম্যের অভিযোগ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে থাকাকে ‘ইতিবাচক অর্জন’ উল্লেখ করে টিআইবির প্রধান অভিযোগ করেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় টিকা পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল দুর্গম এলাকা, বস্তিবাসী, বয়স্ক ব্যক্তি, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করা, ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদানের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা কিন্তু বাস্তবে ততটা দেখা যায়নি। যে কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা গ্রহণের যে হার, সেটি জাতীয় হারের অনেক কম।’

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকা প্রাপ্তির হার ৪৪ শতাংশ বলেও দাবি করা হয় গবেষণায়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মূল ধারার জনগোষ্ঠীর তুলনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অবহেলার শিকার হয়েছে। এসব এলাকায় প্রচার-প্রচারণার বেশ ঘাটতি ছিল। প্রান্তিক পর্যায়ে ৪৫টি টিকা কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি টিকা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীবান্ধব কোনো পরিবেশ ছিল না।’

টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলা হলেও করোনায় নমুনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার বেশ ঘটতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রয়োজনের চেয়ে পরীক্ষাগার স্বল্পতা, পরীক্ষাগারে সক্ষমতার অধিক সেবাগ্রহীতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে নমুনা পরীক্ষায় নানা সমস্যা এখনও বিদ্যমান।

সেবাগ্রহীতা জরিপে যারা নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়েছিল তাদের ২৬.১ শতাংশ নমুনা দিতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ৬৮.৬ শতাংশ বলেছেন, নমুনা দেয়ার সময় পরীক্ষাগারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়নি।

নমুনা পরীক্ষায় গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ফিরে এসেছে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ।

এ ছাড়া পরীক্ষাগারে কর্মীদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, নিজ বাসা থেকে নমুনা দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যেতে হয়েছে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, আর ভুল প্রতিবেদন দেয়ার কারণে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করতে বাধ্য হয়েছে ৩.২ শতাংশ মানুষ।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক রফিকুল হাসান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম।

এ বিভাগের আরো খবর