বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা সাফল্য, কেনায় স্বচ্ছতার ঘাটতি: টিআইবি

  •    
  • ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:১৬

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার সাফল্যের সাথে কোভিড ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে।’

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় টিকা প্রদানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে থাকলেও টিকা কেনা ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে। তবে সামগ্রিকভাবে টিকা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে।

মঙ্গলবার টিআইবি আয়োজিত ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকার সাফল্যের সাথে কোভিড ক্রাইসিস মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কোভিডের টিকা প্রদানের হারে এগিয়ে আছে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ ৭৫ শতাংশ এবং ৬৭ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে। কাজেই এটি ইতিবাচক। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ইতিবাচক অর্জন আমরা দেখতে পেয়েছি। আজকের প্রতিবেদনে আমরা বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি জাতীয় টিকা পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল দুর্গম এলাকা, বস্তিবাসি, বয়স্ক ব্যক্তি বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিকার রেজিস্ট্রেশন করা, ভ্রাম্যমাণ টিকা প্রদানের অঙ্গিকার করা হয়েছিল। এ পরিকল্পনা কিন্তু বাস্তবে ততটা দেখা যায়নি। যে কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে টিকা গ্রহনের যে হার জাতীয় হারের অনেক কম। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির টিকা প্রাপ্তির হার মাত্র ৪৪ শতাংশ। এটা উদ্বেগের বিষয়।’

তিনি জানান, দ্বিতীয় বিষয়টি হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মানুষ টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, মূলধারার জনগোষ্ঠির তুলনায় অবহেলার শিকার হয়েছেন। এসব এলাকায় প্রচার প্রচারণার বেশ ঘাটতি ছিল। প্রান্তিক পর্যায়ে ৪৫টি টিকা কেন্দ্রের মধ্যে ৩১টি টিকা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীবন্ধব কোনো পরিবেশ ছিল না।

সামগ্রিকভাবে টিকা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিকা কার্যক্রমে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে, এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মোটাদাগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু বলেছেন। কিন্তু তার সেই বক্তব্যে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্লেষণমূলক তথ্য প্রকাশ হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন টিকায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমরা দেখতে পেয়েছি বাস্তবে তার তুলনায় অর্ধেকের মত ব্যয় হয়েছে। সরকারও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশ করছে না।’

টিআইবির তথ্য বলছে, টিকা কেনা ও ব্যবস্থাপনায় ১৪ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

এই তারতম্যের কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তথ্য প্রকাশের ঘাটতি, গোপনীয়তার সংস্কৃতির কারণেই এসব হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এটা যৌক্তিক নয় যে, তথ্য প্রকাশ করা যাবে না; টিকা ক্রয়ের চুক্তিতে এটা বলা হয়নি। এর বাইরে থেকেও যেসব জায়গা থেকে টিকা সংগ্রহ করা হয়েছে তার তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।’

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন, কাওসার আহমেদ ও রাবেয়া আক্তার কনিকা।

গবেষণা প্রতিবেদনে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের কথা বলা হলেও করোনায় নমুন পরীক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতার বেশ ঘটতি ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রয়োজনের চেয়ে পরীক্ষাগার স্বল্পতা, পরীক্ষাগারে সক্ষমতার অধিক সেবাগ্রহীতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে নমুনা পরীক্ষায় নানাবিধ সমস্যা এখনো বিদ্যমান। সেবাগ্রহীতা জরিপে যারা নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়েছিল তাদের ২৬.১ শতাংশ নমুনা দিতে গিয়ে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যার মধ্যে ৬৮.৬ শতাংশ বলেছেন নমুনা প্রদানের সময় পরীক্ষাগারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়নি।

এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে নমুনা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর ফিরে আসা (১৭.৩ শতাংশ), পরীক্ষাগারে কর্মীদের দুর্ব্যবহার (১৬.৭ শতাংশ), নিজ বাসা থেকে নমুনা দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা (১০.৩ শতাংশ), নমুনা দিতে একাধিকবার কেন্দ্রে যাওয়া (১০.৩ শতাংশ), ভুল প্রতিবেদন দেয়ার কারণে পুনরায় পরীক্ষা করতে বাধ্য হওয়া (৩.২ শতাংশ) উল্লেখযোগ্য।

সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার না থাকার কারণে সেসব জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে অন্য জেলায় পাঠানো হয় বা মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করে আসায় বেশ ব্যয় ও ভোগান্তি বেড়েছে বলেও দেখিয়েছে টিআইবি।

নমুনা পরীক্ষায় যাতায়াত বাবদ গড়ে ১৪০ টাকা ব্যয় হয়েছে। যারা সরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে তাদের যাতায়াত, পরীক্ষা ফি ও অন্য খরচ মিলিয়ে গড়ে ৩৯৯ টাকা খরচ করতে হয়েছে। অন্যদিকে যারা বেসরকারি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছে তাদের গড়ে ৩ হাজার ৩৮১ টাকা খরচ হয়েছে।

জরিপে বলা হয়, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণ করেছে তাদের ১৮.৯ শতাংশ অন্য জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়েছে। যা তাদের ওপর অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।

সেবা প্রাপ্তির জন্য জেলার ভেতরে বা বাইরে শুধু যাতায়াত বাবদই গড়ে ৩ হাজার ৫৩৫ টাকা খরচ করতে হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সেবাগ্রহীতাদের ১৫ শতাংশ প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ভেন্টিলেশন সুবিধা পাননি, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রয়োজনে যথাসময়ে আইসিইউ সেবা পাননি এবং ৯ শতাংশ হাসপাতালে চিকিৎসাকালীন সময়ে একবারও আইসিইউ সেবা পাননি বলে টিআইবি দাবি করেছে।

সরকারি হাসপাতালে সেবার অপ্রতুলতার কারণে ও ভালো সেবা পেতে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতে শয্যা, ওষুধ, আইসিইউ, অক্সিজেন ও অন্য খরচসহ গড় চিকিৎসা খরচ যেখানে ৩৫ হাজার ৯৩৮ টাকা, পক্ষান্তরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৭ টাকা। জরিপে ৩.৭ শতাংশের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বাড়ি থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম।

এ বিভাগের আরো খবর