ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় রমজান সামনে রেখে প্রতি বছরই বিস্তীর্ণ জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফল বাঙ্গি চাষ করেন কৃষক।
উপজেলায় এ বছর ৮৯১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বাঙ্গি। প্রায় প্রতি হাটেই দেখা যায় থরে থরে সাজানো পাকা হলুদ, আধা পাকা সবুজ বাঙ্গি।
বাজারে এবার এ ফলের দামও ভালো। অন্য বছর বাঙ্গির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হলেও এবার খুশি চাষিরা।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহর-গ্রামের হাট-বাজারে যাচ্ছে এই ফল। প্রতিদিন উপজেলার বাজার থেকে শত শত ট্রাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হচ্ছে বাঙ্গি।
সদরপুরে বাঙ্গির প্রধান বাজার কাটাখালী, বাধানোঘাট ও নতুন বাজারে দেখা যায়, ভোর থেকেই চাষিরা বাঙ্গি নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন বাঙ্গি কিনতে। প্রকারভেদে ১০০ বাঙ্গি তিন হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
চাষি রাশেদ শেখ জানান, এক বিঘা (৫২ শতাংশ) জমিতে বাঙ্গি চাষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এ বছর এক বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাঙ্গি তোলার পর সেই জমিতে ধান চাষ করা যায়। একই জমিতে দুই ধরনের ফসল চাষ করতে পেরে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি।’
বাঙ্গির আবাদ সম্পর্কে কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জুলহাস শেখ জানান, ৭৮ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোজার শেষ পর্যন্ত বাজারে চলমান দাম থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
কাটাখালী বাজারের বাঙ্গি ব্যবসায়ী শেখ সামাদ জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় এই বাজারের বাঙ্গি। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন। এ বছর বাঙ্গির দাম ভালো।
ঢাকার দোহার থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ‘রোজার সময় প্রতিবছরই এখানে আসি বাঙ্গি কিনতে। এখান থেকে বাঙ্গি কিনে ঢাকায় বিক্রি করি। একশ বাঙ্গি চার হাজার টাকায় কিনেছি, আবার একটু বড় আকারের একশটি কিনেছি ছয় হাজার টাকায়।’
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, গত বছরের তুলনায় এবার দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। বাঙ্গি তোলার পর ধান চাষ করা যায় ওই জমিতে। একই জমিতে দুই ধরনের ফসল চাষ করতে পারায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষকরা বাঙ্গি চাষে উৎসাহ পাচ্ছেন। একটি উপজেলার ৮৯১ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি আবাদ অনেক বড় ব্যপার। এ ছাড়া চরভদ্রাসন, নগরকান্দা, ভাঙ্গার কিছু এলাকায়ও এ ফর চাষ হচ্ছে। বাঙ্গি চাষে জেলার দেড় হাজার কৃষক জড়িত।’