সূচক উঠানামা করে দরপতন নয়। শুরু থেকেই নিম্নমুখি সূচক লেনদেন শেষ হওয়ার আগে নামল আরও নিচে।
আগের সপ্তাহের মতোই প্রথম দিন সূচক বাড়ার পর টানা পতনের স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে। পর পর দুই দিন দরপতন দেখল পুঁজিবাজার। সোমবার ২৩ পয়েন্টের পর মঙ্গলবার কমল তার প্রায় তিন গুণ-৬৪ পয়েন্ট।
এক দিনে ৩৩৭টি শেয়ারের দরপতনের বিরল সাক্ষী হলো বিনিয়োগকারীরা। বিপরীতে বেড়েছে কেবল ১৮টির দর।
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা দুই শতাংশ না থাকলে পরিস্থিতি কী হতো, তা নিয়ে বলাবলি হচ্ছে পুঁজিবাজারে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠার পর বাজারে এই পরিস্থিতি কখনও হয়নি।
শেয়ার কেনায় আগ্রহ নেই। বরং হাতে থাকা শেয়ার দিনের সর্বনিম্ন মূল্যে বসিয়ে রেখে বিনিয়োগকারীরা বেচে দিতে চাইছে আরও লোকসানের আশঙ্কায়। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
অথচ রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের বড় বিনিয়োগের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল। তার আগে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিগুলোও একই কথা দিয়েছিল।
অথচ রোজার ১০ দিনে আট কর্মদিবসে সূচক কমল ১৯৭ পয়েন্ট। আর এর মাধ্যমে সূচকের অবস্থান নেমে গেল গত ৮ মার্চের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে। দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৭৪ পয়েন্ট, আর ৮ মার্চ ছিল ৬ হাজার ৪৭৪ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার দর হারিয়েছে ৩৩৭টি কোম্পানি। যার দুই শতাধিক দর হারিয়েছে পতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর কাছাকাছি। ক্রেতা ছিল না বিপুল সংখ্যক শেয়ারের।
মঙ্গলবার বেলা যত গড়িয়েছে সূচক পড়েছে তত বেশি
আগের দিনের চেয়ে আরও কমে লেনদেন নেমেছে ৫৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়, যা গত এক বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। গত ৬ এপ্রিল পাঁচ শ কোটির ঘরের নিচে নেমে আসে। সেদিন হাতবদল হয় ৪৯০ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৫৭ কোটি টাকা।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, টেলিকমিউনিকেশন, ভ্রমণ ও অবকাশ এবং সেবা ও আবাসন খাতের সব কটি কোম্পানি দর হারিয়েছে।
সাধারণ বিমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি, কাগজ ও পাট খাতে একটি করে, জীবন বিমা, ব্যাংক, বস্ত্র, বিবিধ ও প্রকৌশল খাতে দুটি করে, ওষুধ ও রসায়ন এবং আর্থিক খাতে কেবল তিনটি করে কোম্পানির দর বেড়েছে।
কোনো রকমে দর ধরে রাখতে পেরেছে ২৩টি কোম্পানি।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মনে করেন, নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছে না কেউ। যে কারণে লেনদেন তলানিতে নেমেছে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘অনেক বিনিয়োগকারী আগেই শেয়ার বিক্রি করে বসে আছেন। বাজার মন্দার কারণে তারা আস্থা পাচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগে। বাজার পর্যবেক্ষণে রাখছেন। যার কারণে লেনদেন বাড়ছে না।’
তবে এটাই বিনিয়োগের প্রকৃত সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের বুঝাতে হবে যে, এখন শেয়ার বিক্রয় নয়, কেনার সময়। তাদেরকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও অন্যদের দায়িত্ব নিতে হবে।’
দর পতনের শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৪.১২ শতাংশ দর কমেছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের। আগের দিন ১০ শতাংশ নগদ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা করে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছর লভ্যাংশ ছিল ১২ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা ২০ পয়সা। লভ্যাংশ কমালেও এবার শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ৫৭ পয়সা বা ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে শেয়ারটির কোনো মূল্যসীমা ছিল না। এ কারণেই দুই শতাংশের বেশি দাম কমতে পেরেছে কোম্পানিটির।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ শতাংশ দর কমেছে এশিয়ান ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন ৭৫ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি ৭৩ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
এশিয়ান টাইগার সন্ধানী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ২ শতাংশ। শেয়ারটির দর নেমে এসেছে অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে। হাতবদল হয়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সায়।
এছাড়া বিবিএস ক্যাবলস, বিডি থাই ফুড, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামি মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ই-জেনারেশন, সোনালী পেপার, ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস ও অ্যাপেক্স ফুডসের দর কমেছে সর্বোচ্চ সীমায়।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
টানা তিনদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটাল। দর বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ। আগের দিনে বেড়েছিল ৯.৭৯ শতাংশ এবং রোববার বেড়েছিল ৯.৯১ শতাংশ। বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় ২০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। আজ সেটা দাঁড়িয়েছে ৪৬ টাকা ৮০ পয়সা।
এরপরেই হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দর বেড়েছে ২.১২ শতাংশ। ২৮৩ টাকায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ২৮৯ টাকায়।
দর বৃদ্ধির তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ১.৬৪ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ টাকা ৫০ পয়সায়। আগের দিন সেটি হাতবদল হয়েছিল ১৮ টাকা ২০ পয়সায়।
এছাড়া এক শতাংশ করে দর বেড়েছে ফার্মা এইডস, ইস্টার্ন কেবলস, এমবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বিকন ফার্মার। আর এক শতাংশের নিচে দর বেড়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক, এইচ আর টেক্সটাইলস ও আজিজ পাইপসের।
লেনদেনের শীর্ষ পাঁচে যেসব খাত
আগের দিনের মতোই শীর্ষস্থানে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। লেনদেন হয়েছে ৭৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। গতকাল লেনদেন হয়েছিল ৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ১৯টি কোম্পানির দর পতনের বিপরীতে কোনো কোম্পানির দর বাড়েনি। অপরিবর্তিত ছিল তিনটির দর।
গতকাল চতুর্থ অবস্থানে থাকা ওষুধ রসায়ন খাতে আবারও দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। হাতবদল হয়েছে ৫৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। গতকাল ১৯টির কোম্পানির দরপতন হয়েছিল, আজকে পড়েছে ২৭টির দর। তিনটির দর বেড়েছে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকার। দর বেড়েছে মাত্র দুটির। কমেছে ৩৯টির। অপরিবর্তিত ছিল েএকটির দর।
পঞ্চম স্থান থেকে এক ধাপ ওপরে উঠে আসা বিবিধ খাতের লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার। আগের লেনদেন কিছুটা বেশি হয়েছি। হাতবদল হয়েছিল ৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। ১১টির কোম্পানির মূল্য হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে দুটির।
সর্বোচ্চ ৫২টি কোম্পানির দরপতন হয়েছে বস্ত্র খাতে। সোমবার লেনদেন হয় ৪৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আজকে হাতবদল হয়েছে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দর বেড়েছে মাত্র দুটির। অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির।