সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসলহানির শিকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচি নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের প্রণোদনা আছে। ওখানে আমন ওইভাবে হয় না, একটাই ফসল। আমরা ইতোমধ্যে কর্মসূটি নিয়েছি আউশে প্রণোদনা দেয়ার জন্য। ক্ষয়ক্ষতি মেটানোর অবশ্যই চাষীদের পাশে এই সরকার থাকবে।’
স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাবে, সুনামগঞ্জের হাওরে উজানের ঢলে বাঁধ ভেঙে ৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অবশ্য মঙ্গলবার নির্দিষ্ট করে আকস্মিক বন্যায় কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এখনও সেই সময় হয়নি। এখন মেঘ আকাশে, আমি কৃষিমন্ত্রী হিসেবে সব সময়ই একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকি, আমাদের চিন্তিত করে। প্রকৃতির উপর তো আমাদের হাত নেই।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদেও আলোচনা করেছি, এমনিও যোগাযোগ রাখছি। তিনি বলেছেন, দেখো, প্রস্তুতি রাখো যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। দুদিনে অস্বাভাবিকভাবে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আবার ১৪-১৫ তারিখে ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সেই বৃষ্টি যদি আল্লাহ সরিয়ে নেন বা কোনো পরির্তন হয়- এটাই আমরা আশা করি।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বোরোতে প্রতি বছর আমাদের ২ কোটি টন উৎপাদন হয়, এর মধ্যে ১২ লাখ টন হয় হাওরে, যেটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে ১২ লাখ টনও বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। এটা আপনাদের জানা দরকার।’
গত সোমবার হাওরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে করা এক সংবাদ সম্মেলনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আমাদের তিনটি স্থানে ভাঙন হয়েছে। ফসলের ক্ষেত্রে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হয়। ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সভায় দেশের সার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সার ডিলারদের অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা এমন হয়। এই মুহূর্তে সার নিয়ে তেমন সমস্যা নেই। আমি মিটিংয়ের আগেও অনেক চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে কোনো অনিয়ম হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
‘এ সারের জন্য মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে, রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। কাজেই এখানে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করছি। সমন্বয়েরও ইনশাআল্লাহ কোনো সমস্যা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অতীতের যেকোনো রেকর্ডকে ব্রেক করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভর্তুকি বা প্রণোদনা যাই বলি বর্তমান সরকার দিচ্ছে। প্রতিবছর আমাদের ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি থাকে বাজেটে। আমরা মনে করেছিলাম যে হারে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ছে তাতে জুন পর্যন্ত ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে দাম বাড়ছে ফলে আমাদের ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
‘এই টাকা কোথা থেকে আসবে। দেশের উন্নয়ন বন্ধ করে অণ্য খাত থেকে ড্রাইভার্ট করে এ টাকা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধৈর্য্য সহকারে কৃষকের প্রতি আন্তরিকতা নিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সেটার লাভ কৃষকের কাছে যাবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি ৩০ হাজার কোটি টাকা। ইউক্রেনের যুদ্ধ, সবকিছু মাথায় রেখে বাজেট আসতেছে। সারে ভর্তুতি বাড়ানোর বিষয়ে এখনও সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। তাহলে তো এই ৩০ হাজার কোটি টাকারই একটা সংস্থান রাখতে হবে। এটা থেকে তো পিছানোর সুযোগ নেই।’