কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া ১৯ বছরের সেই তরুণীকে আগামীকাল বুধবার আবারও হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
১৯ বছরের তরুণীকে কানাডা হাইকমিশনে হস্তান্তর করতে লিখিত আবেদন জানান রিটকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন।
পরে আদালত বাবা-মাকে আগামীকাল বুধবার মেয়েকে নিয়ে আদালতে হাজির হতে বলেন।
এ সময় হাইকোর্ট বলে, ‘১৯ বছরের প্রাপ্ত বয়স্ক তরুণী বাবা-মা ছেড়ে কানাডা যেতে চান, তাকে আটকে রাখা যাবে না। তবে তরুণীর শতভাগ নিরাপত্তা কানাডা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।’
এ সময় আদালতে উপস্থিত থাকা রিটকারি আইনজীবী ও কানাডিয়ান হাই কমিশনের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ করে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘মেয়েটি কানাডা গিয়ে কোথায় থাকবেন, তার পড়ালেখার খরচ কে বহন করবেন কানাডা সরকারের সঙ্গে কথা বলে আমাদেরকে জানান।’
এ সময় তরুণীর বাবা আদালতকে বলেন, ‘মেয়ে কানাডা গেলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে আমার মেয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মাননীয় বিচারপতিদের সঙ্গে একান্তে ৫ মিনিট কথা বলতে চাই।’
তখন বিচারক বলেন, ‘আমরা আপনাদের কথা শুনব। মেয়ের কথা আগামীকাল আবারও শুনব। কানাডায় আপনার মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই আমরা আদেশ দিব। আমরা আগেই বলেছি, বাবা-মায়ের থেকে সন্তানের বড় শুভাকাংখী কেউ হতে পারে না।’
পরে আদালত ১৯ বছরের তরুণীকে আবারও আগামীকাল হাজির করতে বলেন এবং নট টুডে (আজ নয়) বলে আদেশ দেন।
এর আগে গত রোববার এ সংক্রান্ত রিটের শুনানির সময় আদালত বাবা-মাকে উদ্দেশ করে বলেছিল সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক, তাকে জোর করা যাবে না, চাপাচাপি করবেন না। তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
ওই দিন আদালত তরুণীর নাম ও ছবি প্রকাশে গণমাধ্যমের প্রতি নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেয়।
উত্তর মুগদা এলাকায় ঘরে বন্দি করে রাখার অভিযোগ তুলে দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাওয়া এক তরুণীকে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গত ৬ এপ্রিল হাইকোর্টে রিট করে।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এসব মন্তব্য করে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আর মা-বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজিউল্লাহ ও আজিম উদ্দিন পাটোয়ারি।
রিট আবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণী জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনকে জানান যে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি কানাডায় ফিরে যেতে চান।
এ ঘটনায় হাইকমিশন থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপরও কোনো কাজ না হলে হাইকোর্টে রিট করা হয়।