কুমড়ার বেগুনি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর এই সবজিটি নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। ধামরাইয়ের কুমড়ার হাটে বেচা-কেনা কেমন চলছে- এমন প্রশ্ন এখন বিক্রেতাদের শুনতে হচ্ছে হরদম।
রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের খড়ারচর বাজারে শুধু কুমড়া বিক্রির জন্যই গড়ে উঠেছে পাঁচটি আড়ত।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিলামে ২০-২৫ লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি হয় এই বাজারে। ধামরাইসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে পিকআপ ভ্যানে করে কুমড়া নিয়ে আসেন পাইকার ও কৃষকরা। আর এখান থেকেই কুমড়া চলে যায় রাজধানীসহ আশপাশের বাজারগুলোতে।
খড়ারচর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মিষ্টি কুমড়া। ছোট-বড় আকারভেদে একটির ওপর আরেকটি রেখে সাজানো হয়েছে সবজিগুলো। দেখলে মনে হবে যেন মিষ্টি কুমড়ার কোনো রাজ্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাকডাকে নিলামে বিক্রি হয় পণ্যটি।
খড়ারচর এলাকার কৃষকরা জানান, ধামরাই উপজেলার রোয়াইলসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কুমড়ার ব্যাপক আবাদ হয়। ফসল বেচা-কেনার জন্যে ধীরে ধীরে কৃষকরা প্রথমে এই বাজারটিতে ভিড় করতে শুরু করেন। পরে আশপাশের জেলাগুলো থেকেও কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আসতে শুরু করেন এখানে। এভাবে ধীরে ধীরে কুমড়ার বাজার হিসেবে পরিচিতি পায় এলাকাটি।
একতা কাঁচামালের আড়তের মালিক সেকান্দর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে প্রতিদিনই প্রচুর কুমড়া বিক্রি হয়। প্রতিটি আড়তে সাধারণভাবেই ৩ লাখ টাকার মতো কুমড়া বিক্রি হয়। বেশি হলে ৪-৫ লাখও বিক্রি হয়।
‘এই বছর ফলন বেশি হওয়ায় প্রচুর কুমড়া আসছে হাটে। আর দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা আসায় কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন।’
এখানে কুমড়া ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতিদিন একেকটি আড়তে কেনা-বেচা হয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার। মাসে অঙ্কটা কোটি টাকা ছাড়ায়।
পাশের জেলা মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে এই হাটে ৩ হাজার কুমড়া নিয়ে এসেছিলেন কৃষক আবুল কালাম।
তিনি বলেন, 'আমার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। আশপাশে বাজার সেভাবে নাই। এখানে নিয়ে এলে দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। মৌসুমজুড়ে নিয়মিত এখানে কুমড়া নিয়ে আসি।’
ধামরাই উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের মনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমার নিজের ক্ষেত আছে। আশপাশের বাজার থেকেও কুমড়া কিনে নেই। তারপর এই বাজারে নিয়ে আসি। আগে বাইপাইল বা আমিনবাজারের আড়তে পাঠাতাম। এখন খড়ারচর বাজারে নিয়ে আসি। এখানে এখন দূর-দূরান্তের মানুষ আসে। এ জন্য বিক্রি হয়ে যায় দ্রুত।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে কুমড়া কিনতে আসা ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে অনেক কুমড়া আসে বলে দেখে নেয়া যায়। এ জন্য এখানেই আসি নিয়মিত।'
সাভারের হোটেল ব্যবসায়ী নাসিম আল রাজু বলেন, 'টাটকা তাজা কুমড়া পাওয়ার জন্য এই বাজারের বিকল্প নাই। এ জন্য নিয়মিত এখান থেকে কিনি।'
ধামরাইয়ের কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান নিউজবাংলাকে জানান, উপজেলায় চলতি বছর ২৩৩ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন কুমড়া উৎপাদন করা হয়েছে। এখানে ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরাও খুশি।