জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে কফিশপে ডেকে দলবদ্ধ হয়ে পিটুনির অভিযোগ উঠেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই শিক্ষককে বেধড়ক মারধর ও হুমকি দিচ্ছেন কয়েক তরুণ।
মারধরের শিকার আতিকুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। পাশাপাশি তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।
এই বিষয়ে আতিকুর রহমান বলেন, “নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কোর্সের এক মেয়ে ‘রমাদান মোবারক’ জানিয়ে ইমোতে মেসেজ পাঠায়। পরে সে আমাকে ফোন দেয়। আমাকে পরিচয় দিলেও তাকে চিনতে পারিনি। তার ইমোর আর অফিশিয়াল নাম আলাদা ছিল। পরে সে অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন বিষয় আমার কাছ থেকে জানতে চায়। এভাবে সে আমাকে বিভিন্ন সময়ে ফোন দিয়ে বিরক্ত করতে থাকে। আমার পরিবারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। জানতে চায়- আমি বিবাহিত কি না।’
জাবি শিক্ষক দাবি করেন, কিছুদিনের মধ্যেই ওই ছাত্রী তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট পাঠান। পরের দিন ক্লাস শেষে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট গ্রহণ করতেও অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘রিকয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলে সে আমাকে হায় লিখে পাঠায়। তারপর সে আমাকে তার অ্যাকাডেমিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসে। কয়েকবার সমাধানও করে দেই। এরপর সে আমাকে রিভিউ ক্লাস নিতে বলে। কিন্তু আমি বলি, রিভিউ ক্লাস নেয়া শেষ হয়ে গেছে।
‘তারপরও সে আমাকে ফোন করতে থাকে, তাকে পড়ানোর জন্য। আমি তাকে জানিয়ে দেই, পরীক্ষার আগ পর্যন্ত আমি আর এনএসইউ যাব না। আমি জাহাঙ্গীরনগর থাকব। আপনি পড়তে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর আসেন।
‘তারপরও সে আমাকে বারবার কল দিতে থাকে। বারবার অনুরোধের কারণে অবশেষে তাকে পড়াতে রাজি হই এবং এনএসইউতে আমার অফিসকক্ষে আসতে বলি। কিন্তু সে আমাকে বলে, অফিসে অনেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার থাকে, আপনি অ্যারাবিকা কফি হাউসে আসেন।’
জাবি শিক্ষক জানান, অ্যারাবিকা কফি হাউসে কিছুক্ষণ বসার পর মেয়েটি কয়েক যুবককে সঙ্গে নিয়ে আসেন। ওই যুবকরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মারতে শুরু করেন। একপর্যায়ে তাকে কফিশপ থেকে বের করে এনে আরও ছয়-সাত জন মিলে মারধর শুরু করেন।
শিক্ষক বলেন, ‘তারা আমার কোনো কথাই শুনছিল না। ফলে আমি দৌড় দেই। তারা আমাকে দৌড়ে ধরে ফেলে এবং এনএসইউতে আমার ক্যারিয়ার খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিতে থাকে। আমার মানিব্যাগ বের করে সব টাকা নিয়ে যায়। একপর্যায়ে ডেবিট কার্ডের পিন নম্বরও চায়।’
ওই শিক্ষক আরও অভিযোগ করেছেন, মারধরের পর তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে যাওয়ার সময় যুবকদের একজন তার কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে প্রক্টর অফিসে গেলে ওই ছাত্রী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। আর প্রক্টর অফিস থেকে মারধরের বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়া হয়।
ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়ানো নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ম্যাথ বুঝতে আতিকুরের কাছে গেলে তিনি মেয়েটিকে জাবিতে গিয়ে অঙ্ক শিখে আসতে বলেন। তারপর থেকে আতিকুর ওই মেয়েকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করেন। বিভিন্ন সময় দেখা করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। এমনকি মধ্যরাতে নিয়মিত ফোন দিয়ে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘একসময় ওই ছাত্রীকে আইফোনসহ বিভিন্ন দামি উপহার দেয়ার প্রস্তাব দেন আতিকুর। পরে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুদের সহযোগিতা নিয়ে অভিযুক্ত আতিককে আজ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যারাবিকা কফিশপে দেখা করতে বলে।
‘আতিকুর ক্যাফেতে গেলে সেখানে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে। এ সময় তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে শিক্ষার্থীরা তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে। এ সময় তিনি ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবও দেন।’
ওই শিক্ষার্থী দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীরা আতিকুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে নিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ওই ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে প্রক্টরকে অভিযোগের বিষয়ে মেইল করলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় আতিকুর রহমান মামলা করবেন বলেও নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।