‘সামনে ঈদ আসতাছে, ঈদের মধ্যে ঘুরতে নিয়ে যাবা কোথায়, কি কি কিনে দিবা ঈদে, বাবুকে কি কিনে দিবা? সেহরি খাওয়ার পর ঘরে শুয়ে তাহমিনা কথাগুলো বলছিল। কয়েক ঘণ্টা পর সন্তানসহ চিরতরে হারিয়ে গেছে বউ, আমার আর কেউ রইল না।’
কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিলেন ট্রেনের ধাক্কায় নিহত তাহমিনার স্বামী খায়রুল ইসলাম।
সোমবার দুপুর ২টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় ৮ মাস বয়সী শিশুসহ মারা গেছে তার মা ও নানা।
মৃতরা হলেন, অটোরিকশাচালক টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কদমতলী এলাকার তায়েবুল হোসেন, তার মেয়ে অটোরিকশার যাত্রী তাহমিনা বেগম ও তাহমিনার ৮ মাসের ছেলে মো. তাওহীদ।
শিশুর বাবা খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘৮ মাস বয়সী একমাত্র সন্তানও চলে গেল, এখন কাকে নিয়ে থাকব। ছেলের কথা চিন্তা করে বাড়িতে থেকেই চাকরি করতেছি। আর সেই কলিজার টুকরা সন্তান ও বউ আজ শেষ হয়ে গেল। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’
নিহত তায়েবুলের ছেলে ঈসমাইল হোসেন বলেন, ‘বাবা আমার বোন ও তার সন্তানকে আনতে হাতিয়া গিয়েছিলেন। আমাদের অটোরিকশা বাবা নিজে চালিয়ে হাতিয়া রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন।
‘জামালপুর এক্সপ্রেস অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের পাশে তারা ছিটকে পড়ে। বাবা ও ভাগ্নে তাওহীদ ঘটনাস্থলে এবং বোন হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায়।’
হাতিয়া গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী পারুল বেগম বলেন, ‘দেখলাম ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। চালক ও পেছনে থাকা শিশুটা সেখানেই মারা গেছে। আহত নারীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে শুনলাম তিনিও মারা গেছেন।’
তাহমিনার শ্বশুর আলী আজগর বলেন, ‘১০ মিনিটও হয়নি নাতি বাড়ি থেকে তার মা-সহ বের হয়ে নানার বাড়ির দিকে গেছে। তারা আর বাড়ি ফিরল না। নাতি জীবনের প্রথম ঈদটাও করতে পারল না।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল রেলস্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির আইসি সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে এবং আহত একজনকে হাসপাতালে পাঠায়। পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।