বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা হওয়ার কারণ নেই: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৫০

অপপ্রচারে না ঘাবড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম তো বার বারই আমরা ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আসছি। এ জন্য একটু বেশি জিনিসটা বুঝি এবং জানি। আগাম বুঝতে পারি এখন কোন পক্ষ থেকে ঝড়টা আসতে পারে। তো আগে থেকে আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। আমি এটাই বলব, কে কী বলল, কে কী চিন্তা করছে, ওটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।’

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাচ্ছে বলে যে রটনা তৈরি করা হচ্ছে তার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, এ রটনায় ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।

ঋণ নেয়া এবং বিনিয়োগ প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রেও দেশ ও জনগণের লাভ ক্ষতির কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার নিজ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম কথা যারা লিখছে। আমি আবারও বলছি, ওই পত্রিকার লেখা পড়ে আমি রাষ্ট্র চালাই না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এখন তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে, এ রকম একটা কথা রটাচ্ছে।’

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দুই কোটি জনসংখ্যার দেশটির অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার পর তাদের বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধই শুধু অনিশ্চয়তায় পড়েনি, নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সংকট।

দেশটির জনগণ যখন সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে, তখন বাংলাদেশে কথা উঠেছে, এই দেশের সামনেও এমন আশঙ্কা আছে কি না।

তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির বিশ্লেষকরা ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটির বিপর্যয়ের যেসব কারণ তুলে ধরছেন, সেগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিগুলো সেভাবে নেই।

শ্রীলঙ্কা যেসব কারণে বিপর্যয়ে পড়েছে, তার একটি কারণও বাংলাদেশের নেই। দেশটির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে করোনার কারণে পর্যটন খাত মুখ থুবড়ে পড়া। দেশটির জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আয় হতো এই খাত থেকেই। দুই বছর ধরেই প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে তা।এ ছাড়া করোনার সময় রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স কমে গেছে। অর্গানিক কৃষি চালু করতে গিয়ে উৎপাদন কমে গেছে।

এর মধ্যেও নানা মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছে রিজার্ভ। এটি নেমে এসেছে দুই বিলিয়ন ডলারে। চলতি বছর যে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাও নেই দেশটির।

অন্যদিকে করোনায় বাংলাদেশের রিজার্ভ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানির গতি ঊর্ধ্বমুখী। কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। পর্যটননির্ভরতা নেই বাংলাদেশের, অন্যদিকে বাংলাদেশের নেয়া মেগা প্রকল্পগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না, এমন কোনো বক্তব্য অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা কখনও বলেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই হিসেবটা আছে বলেই এটা ওই শ্রীলঙ্কা করা, এটা অতটা সহজ হবে না। আমরা যদি সর্তক থাকি তাহলে কেউ আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এটা আমার বিশ্বাস।’

অপপ্রচারে না ঘাবড়ানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম তো বার বারই আমরা ধাক্কা খেয়ে খেয়ে আসছি। এ জন্য একটু বেশি জিনিসটা বুঝি এবং জানি। আগাম বুঝতে পারি এখন কোন পক্ষ থেকে ঝড়টা আসতে পারে। তো আগে থেকে আমরা সেই ব্যবস্থা নিতে চাই। আমি এটাই বলব, কে কী বলল, কে কী চিন্তা করছে, ওটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।’

সব সময় হিসাব থাকেউন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় আমাদের একটা হিসেব থাকে। বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, আমরা কিন্তু ডিফল্টার না। আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি, প্রত্যেকটা ঋণ আমরা কিন্তু সময় মতো পরিশোধ করেছি। আমরা কিন্তু যত রকম দুর্দশা হোক, এমনকি করোনার মাঝেও আমরা কিন্তু ঋণ খেলাপি হইনি।

‘দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমরা যে উন্নয়নের প্রোগ্রাম নেই ঠিকই আছে, কিন্তু সেটা নেয়ার সময় আমরা কিন্তু হিসেব রাখি। যে কোথা থেকে কত ঋণ আমরা নিলাম আর সেই ডেভেলপমেন্ট যেটা করছি সেখান থেকে কতটুকু আমরা লাভবান হবো, এই উন্নয়ন থেকে রিটার্নটা কী, কতটুকু মানুষের কল্যাণে যুক্ত হবে, এই রিটার্নটার ব্যাপারে আমরা কিন্তু সচেতন।

‘প্রত্যেকটা পরিকল্পনা নেয়ার সময় এটাই হিসেব করি, এই কাজটা করলে পরে কতটুকু আমার দেশের মানুষ পাবে, কতটুকু আমার অর্থনীতিতে যোগ হবে, অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী হবে। মানুষের কল্যাণে কতটুকু দিতে পারব, করতে পারব; আমরা সেই চিন্তাটাই করি।’

বিদেশি ঋণ নিয়ে সতর্কবিদেশি বিনিয়োগ নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সর্তক থাকে বলেও জানান সরকারপ্রধান। বলেন, ‘সেই বিনিয়োগটাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে যে বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে আমার দেশ লাভজনক হবে। একটা বিনিয়োগ আসল আর একটা বিশাল বিশাল কিছু তৈরি করে দিয়ে গেল, তো সেটা আমার কোন কাজে লাগলো না। সেখানে আমরা একটু ধীরে চলি।’

বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণে সর্তকতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্যের কতটুকু পরিবর্তন হবে, সেই চিন্তাটা মাথায় রাখতে হবে। নইলে বিনিয়োগের জন্য যেভাবে সবাই ঝাঁপ দিয়ে আসছে। কিন্তু আমাদের খুব হিসেব করে পা ফেলতে হবে। এটা আমি সবাইকে খুব বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব।’

প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা এ মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়। এটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

এ বিভাগের আরো খবর