বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুতার দামে অস্থিরতা, বাবুরহাটে কাপড়ের দাম বেশি

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:২৩

এ হাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাহিরেও। তবে সুতার বাজার অস্থিতিশীলের কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে বাবুরহাটে পাইকারি ক্রেতা জনসমাগম হলেও করোনা সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট। রমজানের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দেশের নানা প্রান্তের খুচরা কাপড় বিক্রেতারা আসছেন এই হাটে।

প্রতি বছরের মতো এবারও দোকানে দোকানে নিত্যনতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। প্রতি বছর রমজানে ২০০ কোটি টাকার মতো কাপড় বিক্রি হয় এ হাটে।

এ ছাড়া এ হাটের কাপড় রপ্তানি হচ্ছে দেশেবের বাইরেও। তবে সুতার বাজার অস্থিতিশীলের কারণে কাপড়ের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে বাবুরহাটে পাইকারি ক্রেতার সমাগম হলেও করোনা সংকট কাটিয়ে এবার ঈদে কাঙ্খিত বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ীর দোকানে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত তিন দিন জমে ওঠে দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের হাট শেখেরচর-বাবুরহাট।

ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও এ হাটে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের কাপড় বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।

ঈদ ঘিরে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন এ হাটে।

বাবুরহাট থেকে ৪০ বছর ধরে পাইকারি কাপড় কিনে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে খুচরা বিক্রি করছেন রতন দেবনাথ।

নরসিংদীর বাবুরহাটে কাপড়ের এক দোকানি। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবার কাপড়ের দাম একটু বেশি, খুচরা বিক্রির চাহিদা আছে বিধায় আমরা দূর থেকে এ হাটে এসে কাপড় কিনছি। আন্তর্জাতিক বাজারে সুতার মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় কাপড়ের দাম বেড়েছে, আমাদের খুচরা বিক্রেতাদের এ দাম মেনে নিতে হবে।’

বাবুরহাটে পাইকারি কাপড় কিনতে এসেছেন হাজি আব্দুস শহিদ। তিনি বলেন, সিলেট শহরে মক্কা-মদিনা ক্লথ স্টোরে খুচরা কাপড় বিক্রি করেন। প্রায় ৪৫ বছর ধরে এ হাট থেকে কাপড় কিনছেন তিনি। এবার কাপড়ের দাম বেশি বলে জানান তিনি।

শহিদ বলেন, ‘ঈদে খুচরা কাপড় বিক্রির জন্য রোজার মাসে এই প্রথম আসা হয়েছে এ হাটে। আজকে সাদা লং ক্লথ, টেট্রন লুঙ্গি, থান কাপড়, ছাপা শাড়িসহ অনেক কাপড় কিনেছি। তবে এবার কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি।’

মাধবদী থানার বিবিরকান্দি গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম বাবুরহাট থেকে প্রতি বছর জাকাতের জন্য লুঙ্গি ও শাড়ি কেনেন। এবারও কাপড় কিনতে হাটে হাজির তিনি।

নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে বাজেট নিয়ে আসছি, তাতে কুলাতে পারব না। সুতার দাম বেশি হওয়ায় কাপড়ের দাম বেড়েছে। তাই জাকাত দিতে আমাকে একটু ভাবতে হচ্ছে।’

ছাপা থানকাপড় ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছর পর করোনা কাটিয়ে ঈদের বাজারে যেমনটা বেচাবিক্রি হওয়ায় কথা ছিল, তা তুলনামূলক অনেক কম। গত সপ্তাহে কাপড় ভালো বিক্রি হয়েছে। সুতার দাম, গ্রে-কাপড়ের দাম বাড়ার কারণে এবার বিক্রির অবস্থা খুবই খারাপ। কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে, ক্রেতা অনেক কম। এটা আমাদের জন্য দুঃসংবাদ।’

মেসার্স শাহাজাদী থ্রিপিস অ্যান্ড ওড়না হাউসের পরিচালক আবদুল বাতেন বলেন, ‘এবার বাজারের পরিবেশ খুব একটা ভালো দেখতাছি না। তবে আমরা আশাবাদী, বেচাবিক্রির পরিস্থিতি ভালো হবে।’

নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে দোকানে বেচাবিক্রিতে ব্যস্ত ব্যবসায়ীরা। ছবি: নিউজবাংলা

বাবুরহাটের বাসিন্দা কাপড় ব্যবসায়ী সাংবাদিক এ কে ফজলুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাপড়ের জন্য বিখ্যাত শেখেরচর-বাবুরহাট করোনা সংকট কাটিয়ে সবে জমতে শুরু করেছে। কিন্তু অতি মুনাফালোভী সুতা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে সুতার মূল্য বাড়ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কাপড়ের দামও। যার জন্য ঈদ সামনে থাকা সত্ত্বেও হাটের বেচাকেনা ভালো না।

‘ক্রেতা সরগরম কিছুটা থাকলেও পাইকারের যে পরিমাণ কাপড় ক্রয়ের কথা তা করছেন না। তবে পাইকাররা যে কাপড় না কিনলেই নয়, তা কিনছেন।’

শেখেরচর-বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী শেখ সেলিম আহমেদ জানান, দফায় দফায় সুতার দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় তাঁতশিল্প ও কাপড় ব্যবসায়ী মালিকরা। এবার ঈদ ঘিরে বাবুরহাটে ক্রেতা তুলনামূলক কম।

বাবুরহাটের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারকে সুতার বাজার স্থিতিশীল করার আহ্বান জানান তিনি।

শেখেরচর-বাবুরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মনিরুজ্জামান ভূইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে হারে কাপড় বেচাবিক্রি হয়েছে তা আমরা পরিদর্শন করেছি। এ সপ্তাহে হাটে লোকজনের ভিড় হয়েছে। এবার বেচাকেনা হবে এমন আশা আছে।’

তিনি বলেন, ‘রোজা ও বৈশাখের জন্য ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করেন। এবার সুতার মূল্য অস্থিতিশীল হওয়ায় কাপড়ের দর নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে নাই। হঠাৎ করে সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাবুরহাটের কাপড়ের মূল্যও বেড়েছে। এ হাটের বেচাকেনা অন্য বছরের তুলনায় এবার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ।’

এ বিভাগের আরো খবর