বাবা-মায়ের দেয়া নাম শুভ। তবে জীবন সংগ্রামে লড়তে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন তীব্র খান। দুটি পায়ের একটিও নেই তার। তবু মনের জোরে নিজের ভার নিজেই বহন করে চলেছেন তিনি। দমাতে পারেনি কিছুই। ব্যাটারিচালিত একটি গাড়িতে ইলেকট্রনিকস পণ্য মেরামতের কাজ করতে করতে একদিন বড় ব্যবসায়ী হতে চান এই যুবক।
তীব্র বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট বন্দরের বাসিন্দা হলেও থাকছেন বেলতলা বাজার এলাকায়। ১ হাজার ৫০০ টাকায় ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেটির মধ্যে থাকা-খাওয়া আর নিজের ব্যবসার কাজ করছেন তিনি। তার বাবা মারা যান ছোটবেলায়। তবে মা নিয়ে কিছু বলতে আগ্রহী নন।
জন্ম থেকে দুই পা দিয়ে চলার শক্তি হারানো তীব্রর নিজের একটি তিন চাকার ব্যাটারিচালিত গাড়ি রয়েছে। সেই গাড়িতে ঘুরে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে টিভি-ফ্রিজ মেরামত করে থাকেন তিনি।
নিউজবাংলাকে তীব্র খান বলেন, ‘আমি আমার নাম পরিবর্তন করেছি অতীত মুছে ফেলার জন্য। আমি নতুন পরিচয়ে বাঁচতে চাই। আমি কারও সহযোগিতা চাই না। স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচতে চাই। যত কষ্টই হোক ভিক্ষাবৃত্তি নয়, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করব। এ জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি ইলেকট্রনিক জিনিস মেরামত।
‘আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে সকাল থেকে কাজ সন্ধান করি। কোনোদিন ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। আবার কোনো দিন কাজই থাকে না। ’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে পেটের দায়ে পাতারহাট বন্দরে বাদাম বিক্রি করতাম। কিন্তু সেখান থেকে একজন লোক আমাকে নিয়ে ইলেকট্রনিকস পণ্য মেরামতের কাজ শিখিয়েছে। তা রছাড়া ইউটিউব দেখেও আমি অনেক কিছু শিখেছি। মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজ, ফ্যানসহ অনেক কিছু মেরামত করতে পারি। কারও কাছে হাত পাতি না। আমি হোটেলে খাবার খাই এবং মাঝেমধ্যে প্রতিবেশী এক নারী আমাকে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেন।’
তীব্র ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার মেজো ভাই ঢাকার নোয়াপাড়ায় একটি মাদ্রাসার ছাত্র এবং বড় ভাই লঞ্চে রুটি বিক্রি করেন। তাদের ওপরও বোঝা হতে চান না ২০ বছর বয়সী তীব্র। তাই একার বসবাস এই বরিশাল নগরীতে। তীব্রর মোবাইল ফোনটিও চুরি হয়েছে, যা নিয়েও বেশ আক্ষেপ তার।
তীব্রর প্রতিবেশী মো. হানিফ বলেন, ‘তীব্র ১ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে থাকেন। কারও কাছে কোনো সময় হাত পাততে দেখিনি। নিজে আয় করতে পারলে খান, তা না করতে পারলে না খেয়েই থাকেন। তিনি অনেক বড় হতে চান। ওনার পা না থাকতে পারে, কিন্তু ওনার মেধা অনেক।’
মনোরায়া বেগম নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘তীব্র তো প্রতিবন্ধী। চাইলেই ভিক্ষা করে চলতে পারে। কিন্তু ও তা করেনি। নিজের ইচ্ছাক্ষমতায় সে স্বাভাবিক মানুষের মতো বাঁচতে চায়। তীব্র একজন ভালো কারিগর।’
বরিশাল বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক আল মামুন তালুকদার বলেন, ‘যে ছেলেটির কথা বলা হচ্ছে, সে কাজ জানে। অতএব তাকে আমরা কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে যে সুবিধাগুলো দেওয়া যায় তা দেয়ার চেষ্টা করব।’