বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে উৎপাদনে বিঘ্নের কারণে সরবরাহ সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পর আগামী দুই সপ্তাহ দেশের সকল শিল্প-কলকারখানায় গ্যাস সরবরাহ চার ঘণ্টা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এসেছে।
রোজার প্রথম দিন থেকে রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নের পর বিদেশ থেকে তরল গ্যাস বা এলপিজি এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলা।
সংস্থাটি বলেছে, ‘রমজান উপলক্ষে ১২ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী ১৫ দিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রতিদিন মোট চার ঘণ্টা সব শিল্প শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’
গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ভিজিল্যান্স টিম বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাময়িক এই অসুবিধার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে পেট্রোবাংলা।
শিল্পমালিকদের উদ্বেগ
পেট্রোবাংলার এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পোশাক উৎপাদনের এই ভরা মৌসুমে কারখানায় চার ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে উৎপাদন কর্মকাণ্ড মারাত্মক ব্যাহত হবে। সার্বিকভাবে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
‘আমরা খুব ভালো সময় পার করছি। প্রচুর অর্ডার হাতে আছে। নতুন অর্ডারও আসছে। সব মিলিয়ে রমরমা অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের পোশাকশিল্পে। প্রতি মাসেই রপ্তানি বাড়ছে। এ অবস্থায় আমরা যদি গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে না পারি, তাহলে বায়ারদের সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে পারব না। আমাদের ক্ষতি হবে। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ উৎপাদন কম হবে। রপ্তানি কমে যাবে।
‘তবে এতে জনসাধারণের সত্যিকারের উপকার হলে আমরা সাময়িক এই ক্ষতি মেনে নেব।’
সংকটের নেপথ্যে
রমজানের প্রথম দিন থেকেই দেশে গ্যাস সংকট শুরু হয়। রাজধানীতে অনেক বাসায় ঠিকমতো চুলা জ্বলছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রান্নাঘরে কাটিয়েও প্রয়োজনীয় রান্নাটা সারতে হিমশিম খেয়েছেন গৃহিণীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ আর সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনে হঠাৎ করে সমস্যা তৈরি হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সারা দেশে, বিশেষত রাজধানীর গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায়। শেভরন পরিচালিত এই গ্যাসক্ষেত্রে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা মেরামতের কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা অন্যতম। সেই ক্ষেত্রের ছয়টি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগানের সংকট তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়। সংকট কাটিয়ে গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে গত ৩ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল।
এর মধ্যে গত ৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ফেসবুক পোস্টে জানান, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির একটি বড় চালান পরের দিন আসছে। ২ হাজার ৯৫০ ঘনফুটের এই চালান পৌঁছালে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে যে ভোগান্তি, তা দূর হবে বলে আশার কথা বলেছিলেন তিনি।