সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যায় ফসলের ক্ষতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বাঁধ ভেঙে ফসলের ক্ষতির ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে সোমবার হাওরে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ থাকলে তা মওকুফের বিষয়েও সরকার চিন্তা করছে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭ সালে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এমন আট প্রকৌশলীকে কিন্তু আমরা সাসপেন্ড করেছি। এটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে। নিয়মের বাইরে কিন্তু কাউকে সাসপেন্ড করতে পারব না।
‘দুদকের মামলা চলবে, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে আটজনের বিরুদ্ধে। আমরা রাতারাতি একজন প্রকৌশলীকে বলতে পারি না তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমরা নিয়মের মধ্যে চলছি। আমি বলব না পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করে, আমরা চেষ্টা করছি সেটি কমিয়ে আনার জন্য, সহনীয় পর্যায়ে আনার জন্য।’
বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এক দিনে ১৩০ মিলিমিটার এবং মোট ১২০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ এই বৃষ্টিপাতের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। নদীর পাড়ে যে পলিমাটিগুলো নরম থাকে, যখন পানি নামতে পারে না তখন বাঁধগুলো নরম হয়ে যায় এবং প্রাকৃতিক কারণে নদীভাঙন হয়। এটা কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। এটার মধ্যে বাস করতে হবে।
‘কৃষিমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হাওরে যাব এবং কত পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা জানতে পারব। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সব সময় সক্রিয় আছি। আমরা চাই না ফসলের ক্ষতি হোক। হাওরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আশা করি আগামী বছর সেই সমস্যা হবে না। এরই মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’
এদিকে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ১৪টি হাওরের ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন জানিয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘৫৩৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে তিন জায়গায় যথাক্রমে ৫০, ৫০ ও ৩০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই জায়গা বন্ধ করতে পেরেছিলাম এবং আরেকটা জায়গায় পানির গভীরতা ৫০-৬০ মিটার। আরেকটা মেরামতের কাজ চলছে।
‘আমরা পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। হাওর আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে কাজ করছি। আজ থেকে ১৩ বছর আগে ভাঙন ছিল সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর, এখন সেটা সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে এসেছে।’