ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের গ্রেপ্তারের ঘটনায় ‘আরও কারও হাত থাকতে পারে’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে সোমবার ‘পিআইবি-সোহেল সামাদ স্মৃতি পুরস্কার-২০২০’ বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় হৃদয় মণ্ডলের জামিনে স্বস্তি প্রকাশ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হৃদয় মণ্ডলের জামিনে আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, হৃদয় মণ্ডলের পুরো ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
‘হৃদয় মণ্ডল জামিনে মুক্তি লাভ করার পরও বলেছেন, তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র হয়েছে। তিনি বলেছেন, শিক্ষকদের সেখানকার অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র। আমি মনে করি সেটার পেছনে আরও কারও হাত থাকতে পারে।’
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে তার আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। এই মিছিলে বহিরাগতরা উসকানি দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন।
তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তার নামে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
আসাদ শুরুতে জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মামলা করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, তিনি আসাদকে মামলা করতে বলেননি। তাকে পুলিশ মামলা করতে বলতে পারে।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম (সদর সার্কেল) জানান, প্রশাসন থেকে মামলার জন্য কাউকে জোর করা হয়নি।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার মধ্যে রোববার ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় হৃদয় মণ্ডলকে জামিন দেয় আদালত। পরে কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে, সরকারের দুর্নীতি নিয়ে দুদকে বিএপির চিঠি দেয়ার ঘটনাকে নাটক বলে অবিহিত করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিতে যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তাদের পক্ষ থেকে আলাল ও দুলালরা দুদকে গিয়েছে। আমি মনে করি দুদক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে যে লুটপাটটা হয়েছে এবং তাদের কারণে কীভাবে দেশ পরপর পাঁচবার দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, সেই তথ্যটা পাবে।
‘যখন দুর্নীতির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে তখন মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। তারা সত্যিকার অর্থে একটু নাটক করতে গেছেন।’
পাকিস্তানের নির্বাচন প্রক্রিয়া গ্রহণ সম্পর্কিত মির্জা ফখরুলের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে এতদিন ধরে বলে আসছিলাম বিএনপি আর তার মিত্রদের কাছে পাকিস্তানই হচ্ছে আদর্শ। তারা দেশটাকে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে নিয়ে যেতে চায়। সেটি তারা গতকাল খোলাসা করেছেন।
‘পাকিস্তানকে যে তারা অনুসরণ করেন এবং তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন দেশটাকে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করতে, সেটি করতে পারেননি। এখন তারা যে পাকিস্তানী ভাবাদর্শে নিয়ে যেতে চায় সেটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব তার বক্তব্যের মাধ্যমে খোলাসা করেছেন।’