বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিস্তার পানিতে ফসলের ক্ষতি, দিশাহারা কৃষক

  •    
  • ১১ এপ্রিল, ২০২২ ১২:৫৩

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছি। আশা করি, কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।’

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গেছে। সে পানিতে তলিয়ে গেছে চরের ফসল। বছরজুড়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাঁধে বাড়ছে ঋণের বোঝাও। এতে আগামী দিনে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বিবর্ণ হওয়ার পথে।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মোফাখারুল ইসলাম বলেন, জেলায় দুই সপ্তাহ ধরে টানা ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ১৫ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এতে জেলায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ছোট আকারে বন্যা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

চৈত্র মাসে তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে চরে কৃষকের পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বাদাম, বোরো ধানসহ অনেক ফসল পানিতে তলিয়ে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের কৃষক হক্কানি ব্যাপারী। চৈত্র মাসে অসময়ের বৃষ্টির কারণে তার আবাদকৃত বাদাম, বোরো ধান, পেঁয়াজ, কালিজিরা, ধনিয়া, পালংশাকের বীজ, ৩২৮টি মিষ্টি কুমড়াগাছসহ প্রায় ৬ একর ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে।

এক হাঁটু পানিতে নেমে পচা পেঁয়াজ, রসুন, বাদাম ও ধানের গাছ তুলে হাতে নিয়ে দেখছেন শেষ সম্বলটুকুর কিছুটা হলেও ঠিক আছে কি না। এ সময় জানান, তার কাঁধে প্রায় ১১ লাখ টাকার ঋণের বোঝা। তিস্তার পানির মধ্যেই ফ্যাকাশে হয়ে গেছে তার স্বপ্ন। কিভাবে এই ঋণ পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে তার।

তিনি বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবিনি চৈত্র মাসে এমন বন্যা হবে। এবারের বন্যায় আমার ৬ একর জমির সব ফসল শেষ। এর আগে কার্তিক মাসে চাষের আলুও বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। সার, কীটনাশক, বীজসহ খরচের প্রায় ১১ লাখ টাকা দেনা করেছি। ফসল তুলে সেগুলো শোধ করতাম। এখন কিভাবে দেনা শোধ করব সেই চিন্তায় ঘুম আসে না।’

হক্কানির মতোই অবস্থা তরুণ কৃষক কুদ্দুসের। মাস্টার্স পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে তিস্তার চরেই শুরু করেন কৃষিকাজ। প্রায় লাখ টাকা ব্যয়ে এক একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন তিনি। কিন্তু অসময়ে পানি বেড়ে তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।

কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চরে ৫ একর জমিতে পেঁয়াজ ও ৪ একর জমিতে বোরো চাষে প্রায় ৭ লাখ টাকা ঋণ করেছি। কিন্তু বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল। অথচ তিস্তা চরের আবাদ দিয়ে দেশের শাক-সবজি ও মসলার চাহিদা অনেক পূর্ণ হয়।’

প্রায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন কৃষক মোহাম্মদ আলী। ফলনও ছিল ভালো। বিঘাপ্রতি ৮০ থেকে ৮৫ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ পানি বাড়ায় তিনি ১৫ থেকে ২০ মণ পেঁয়াজ পরিপক্ব হওয়ার আগেই তুলে ফেলেছেন।

তিনি জানান, সেই পেঁয়াজ এখন মানুষ ৫ টাকা কেজিতেও কিনতে চায় না। কামলা খরচও উঠছে না। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে চরের পটোল, ঝিঙা, মরিচ, করলা, শসা, চিচিঙ্গা ও শাক-সবজির ক্ষেতও তলিয়ে গেছে। সবজি পচে যাওয়ায় সেগুলোর গন্ধে এখন আর তিস্তা পারে যাওয়া যায় না।

গ্রামের মোকছেনা বেগম বলেন, ‘রোজার মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। খাওয়ার ব্যবস্থা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাথার ওপর ঋণের টাকা তো আছেই।’

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আগামী দিনে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল তুলতে পারবে বলে মনে হয় না। তাই কৃষকদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, জেলার রাজারহাট, উলিপুর, সদর, ভূরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলায় এ বছর ২৭৩ হেক্টর বোরো ধান, পেঁয়াজ, তরমুজ, পাট, ভুট্টা, চিনাবাদাম ও শাক-সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি বাড়লে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত শুরু করেছি। আউশ মৌসুমেও সরকারের প্রণোদনা রয়েছে। সেই তালিকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরও এর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে আশা করি।’

এ বিভাগের আরো খবর