বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খোদার কাছে প্রার্থনা ওরা স্বাভাবিক মানুষ হোক: হৃদয় মণ্ডল

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২২ ২৩:৩৫

হৃদয় মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবার মাঝে ফিরে আসব এটা আমার প্রত্যাশা। আমাকে সবাই যেন আপন করে নেয়, আমিও যাতে সবাইকে আপন করে নিতে পারি, কোনো কলহ যাতে না থাকে।’ 

‘ওরা তো শিশু, ওদের কথা বাদই দিলাম। যা করেছে ওরা হয়তো না জেনেই করেছে। খোদার কাছে প্রার্থনা করি, ওরা সুন্দর ও স্বাভাবিক মানুষ হোক।’

যাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ দিন কারাভোগ করলেন, তাদের উদ্দেশে এমন শুভ কামনাই করছেন মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।

ধর্ম অবমাননার মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে রোববার বিকেলে শহরের উপকণ্ঠ পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক কোয়াটারের নিজ বাসায় যান এই শিক্ষক। সেখানে তার সঙ্গে কথা বলেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক।

হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে গত ২০ মার্চ ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলে স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। দুই দিন পর তার শাস্তির দাবিতে মিছিল করে। সে রাতে পুলিশ তাকে থানায় নেয়। ধর্ম অবমাননার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে পাঠানো হয় কারাগারে।

অভিযোগকারী সেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না জানতে চাইলে হৃদয় মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, তার কোনো ক্ষোভ নেই। শিশুরা না বুঝেই হয়তো এমনটা করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমি সবার মাঝে ফিরে আসব- এটাই আমার প্রত্যাশা। আমাকে সবাই যেন আপন করে নেয়, আমিও যাতে সবাইকে আপন করে নিতে পারি। কোনো কলহ যাতে না থাকে। আমি পরশু দিন (মঙ্গলবার) হেডস্যারের সঙ্গে দেখা করব। স্কুল খোলা থাকলে সে দিনই ক্লাস নেব আশা করি।’

তিনি কিছুটা রাগী প্রকৃতির বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একটু রাগী, আমি ওদের (শিক্ষার্থীদের) স্কুলমুখী করতে চাই, লেখাপড়া করাতে চাই।’

সংবাদমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের আপ্রাণ চেষ্টায় আমি মুক্ত হয়েছি। আপনারা আমাকে আপন করে নিয়েছেন।’

হৃদয় মণ্ডল জানান, শারীরিকভাবে তিনি কিছুটা অসুস্থ, ঢাকায় যাচ্ছেন ডাক্তার দেখাতে। মঙ্গলবার ফিরে তিনি স্কুলে যাবেন।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে রোববার জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বিকেল ৫টায় মুক্ত হন তিনি।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সে সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজ্ঞানের এই শিক্ষক। কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারেষি থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’

রায়ের পর হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘স্বামী জামিন পাওয়ায় আমি খুশি। আমি তাকে নিয়ে যেন নিরাপদে থাকতে পারি। আমার স্বামী যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে।’মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। এই মিছিলে বহিরাগতরা উসকানি দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তার নামে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।আসাদ শুরুতে জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মামলা করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, তিনি আসাদকে মামলা করতে বলেননি। তাকে পুলিশ মামলা করতে বলতে পারে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম (সদর সার্কেল) জানান, প্রশাসন থেকে মামলার জন্য কাউকে জোর করা হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর