বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সন্তানের সঙ্গে জবরদস্তি নয়, কানাডিয়ান তরুণী ইস্যুতে হাইকোর্ট

  •    
  • ১০ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫৬

কানাডিয়ান তরুণী ইস্যুতে বিচারক বলেন, সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক, তাকে জোর করা যাবে না। তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এক বাবা-মাকে পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।

বিচারক বলেন, সন্তান যখন প্রাপ্ত বয়স্ক, তাকে জোর করা যাবে না। তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মত সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেয়।

আদালতে আদেশের বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।

উত্তর মুগদা এলাকায় ঘরে বন্দি করে রাখার অভিযোগ তুলে দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া এক তরুণীকে হাজির করতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী রোববার দুপুরে মেয়েটিকে আদালতে হাজির করে মুগদা থানার পুলিশ। এ সময় মেয়েটির বাবা-মাও হাজির হন।

পরে আদালত মেয়েটির বক্তব্য শুনে। এ সময় উভয়পক্ষের আইনজীবীসহ উপস্থিত সবাইকে কোর্টের বাইরে থাকতে হয়।

মেয়েটির বক্তব্য শুনে পরে উভয়পক্ষের আইনজীবীসহ সবাইকে কোর্টে ডাকেন বিচারক।

এ সময় মেয়েটির বাবা আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমিও কানাডার নাগরিক। আমি সব সময় কানাডিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এখন তারা যদি আমার মেয়েকে নিয়ে যায় বা মেয়ে কানাডা চলে যায় এরপর তার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।’

এসময় আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক ফারাহ মাহবুব মেয়েটির বাবার কাছে জানতে চান আপনি কথা বলবেন নাকি আপনার আইনজীবী কথা বলবেন। জবাবে মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার আইনজীবী কথা বলবেন, তবে আমি এইটুকুই বলবো।’

এ সময় রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন আদালতকে বলেন, ‘মেয়েটি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এখন যে পরিস্থিতিতে (বাবা-মার কাছে) আছে, সেখানে মেয়েটি থাকতে চাচ্ছে না। সে তার স্বাধীনতা পাচ্ছে না।’

রিটকারী আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারক বলেন, ‘সে (মেয়েটি) যেখানে জন্মগ্রহণ করেছে, যে পরিবেশে লেখাপড়া করেছে সে এখন সেটি চায়। এখানে তার বন্ধু নেই, তেমন পরিবেশ নেই। এখানে সে তার মতো পরিবেশ খুঁজে পায় না। এই পরিবেশে তাকে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।’

বিচারক বলেন, ‘এখানে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সে কানাডায় ফিরে যেতে চায়। এখন আমাদের কনসার্ন হলো সে কানাডায় ফিরে যাবে এজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা বাবা-মাকে করে দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যে টিউশন ফি জমা হয়েছে তা দিয়ে দিতে হবে। কানাডা যাওয়া পর্যন্ত এই প্রসেসে মেয়েটি তার বাবা-মার কাছে থাকবে। একইসঙ্গে মেয়েটির মোবাইল ফোন দিয়ে দিতে হবে। ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে হবে।’

এ সময় মেয়েটির বাবা ও মাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, ‘সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক তাকে জোর করা যাবে না তাতে সে আরও বেশি অবাধ্য হয়ে যাবে। বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। তার সঙ্গে জটিল সম্পর্ক না রেখে, বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

বিচারক আরও বলেন, ‘এখনকার সন্তানদের চিন্তাধারা অন্য রকম। এখন বাচ্চারা আমাদের শেখায়। তারা এখন বাবা-মাকে গাইড করে। এটার মধ্যেও এক ধরনের মজা আছে।’

‘বিদেশে বড় হওয়া ছেলেমেয়েদের মনোভাব আমাদের এখানে বড় হওয়া সন্তানদের মতো না। ওর জন্ম ওখানে। ও এখন ওখানে (কানাডা) ফিরে যেতে চাইলে আটকানো যাবে না। সন্তানদের সঙ্গে বাবা ফ্রি থাকুন। সন্তান যেহেতু বড় তাকে ফ্রিডম (স্বাধীনতা) দিন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলুন।’

এক পর্যায়ে মেয়েটির মা আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান।

আদালত অনুমতি দিলে সামনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমিও মেয়েকে নিয়ে কানাডায় ফিরে যেতে চাই। কিন্তু ও আমাদের কথা শুনুক।’

এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি মা হিসেবে চাই না যে, আরেকটি ঐশী তৈরি হোক।’

এ সময় বিচারক মাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ওর কোনো নেগেটিভ কথা বলবেন না। এখানে কেউ ওর সম্পর্কে নেগেটিভ শব্দ বলেনি। আশা করি আপনারাও বলবেন না। আমরা বলবো আপনারা ওর ইচ্ছাকে সম্মান দিন। ও ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সেখানে ওকে পড়ান। ওর সঙ্গে আপনারা একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। ওকে কানাডায় যেতে বাধা দিবেন না। কোনো কিছু বাধ্য করলে ফল ভালো হয় না।’

পরে আদালত এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবীকে আবেদন সংশোধন করে পুনরায় দেয়ার নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।

পরে মেয়েটির নাম ও ছবি দিয়ে কোনো ধরনের সংবাদ প্রকাশ না করতে গণমাধ্যমকেও বলা হয়।

মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল রাজধানীর উত্তর মুগদায় ১০ মাস ধরে ঘর বন্দি করে রাখা কানাডিয়ান নাগরিকত্ব পাওয়া এক তরুণীকে হাজির করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

রিট আবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণী জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তার বাবা-মাও কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি।

রিট আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওই তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়েছে। তাকে তার নানি ও মা সব সময় বাসায় তালাবদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকাস্থ কানাডিয়ান হাইকমিশনকে জানান যে, তাকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি কানাডায় ফিরে যেতে চান।

এ ঘটনায় হাইকমিশন থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি মুগদা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপরও কোনো কাজ না হলে কানাডিয়ান হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। আর বাবা মার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অজিউল্লাহ।

এ বিভাগের আরো খবর