প্রস্তাবিত বৈষম্যবিরোধী আইনে শাস্তির বিধান নেই। এই আইনকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হলে সুষ্পষ্ট শাস্তির বিধান যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘প্রস্তাবিত বৈষম্যবিরোধী আইন’ শীর্ষক এক সংলাপে এ দাবি জানান তারা।
আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্বরারোপ করেন এবং তদারকির জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন বক্তরা।
বৈষম্যবিরোধী যে বিল সম্প্রতি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজন করা হয় এ আলোচনা সভা।
নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বহুদিন ধরেই এমন একটি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
আলোচনায় আংশ নিয়ে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই আইনের সঠিক বাস্তবায়নের জন্যে রাজনৈতিক স্বদিচ্ছা থাকা জরুরি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রধান মিজ শাহীন আনাম বলেন, ২০০৭ সালে প্রথম এর কাজ শুরু হয় এবং লক্ষ্য করা হয়, বৈষম্যকে সুনিদির্ষ্টভাবে লক্ষ্য করে কোনো আইন নেই।
পরে জনমত জরিপের মাধ্যমে ২০১৭ সালে আইন কমিশনে খসড়া জমা দেয়া হয়। এখন এই আইনটি জনগণের প্রত্যাশাকে প্রতিফলিত করে কিনা সেটা পর্যবেক্ষণ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী প্রধান জাকির হোসেন বলেন, ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে কি ধরণের বৈষম্য চর্চা হয়, সেটা বোঝা খুব কঠিন।
উত্থাপিত আইনে সুস্পষ্টভাবে কোনো শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আইনে সুস্পষ্ট শাস্তির বিধান থাকা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনে বৈষম্যের সংজ্ঞায় এখনও কিছু সমস্যা আছে। এ ব্যাপারে আইনে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। বৈষম্যের প্রতিকার কীভাবে হবে সেটা এই আইনে স্পষ্ট নয়।’
সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের সিনিয়র ফেলো ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ফস্টিনা পেরেইরা বলেন, ‘একজন ব্যক্তি একাধিক বৈষম্যের সম্মুখীন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি কী ধরনের প্রতিকার পাবেন খসড়া আইনে সেটা স্পষ্ট নয়।’
রাজনৈতিক শূন্যতার প্রেক্ষিতে বর্তমানে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার ব্যপ্তি ঘটানোর জন্যেই সব ধরণের আইন প্রণীত হয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক।
তিনি মনে করেন, অনেক ক্ষেত্রে এ ধরণের আইনে তদারকি কমিটি গঠিত হলেও তাদের কোন ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয় না। ফলে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন দেখা যায় না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপের সদস্য ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যের কাঠামোগত সংজ্ঞায় মানসিক প্রতিবন্ধী, বর্ণ বৈষম্য ও এসিডদগ্ধদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
তা ছাড়া এই আইনে ভূমির আইনগত মালিকদের কথা বলা হলেও প্রথাগতভাবে ভূমির মালিকদের তথা আদিবাসীদের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এই আইনের সঠিক বাস্তবায়নে একটি বৈষম্যবিরোধী কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন তিনি।