চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি থেকে সিআরবি সড়ক ধরে সাত রাস্তার মাথার পশ্চিম দিকে একটু এগোলেই শিরিষ তলা। সেখানে একটু এগোতেই মাঠের কোণায় সামিয়ানা টানানো, বাইরের পর্দায় বড় করে লেখা ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’।
দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে ভাসমান কোনো দোকান। কাছে গেলেও সেই ভ্রম ভাঙতে কিছু সময় লাগতে পারে।
ভাসমান দোকানের মতো স্থানটিতে সকাল থেকেই চলে ইফতার তৈরির প্রক্রিয়া। ভেতরে সারি সারি সাজানো চেয়ার-টেবিল, যেন ক্রেতাদের সুবিধার্থে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
দেখতে ভাসমান দোকানের মত মনে হলেও এটা আসলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ইফতার বুথ। প্রতিদিন শহরের ৩০০ থেকে ৫০০ দুস্থ ও পথচারীর ইফতার তৈরি হয় এখানে।
ওই এলাকার বাস্তুহারা মানুষ ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন বস্তি এলাকা ও এতিমখানা থেকে রোজাদারদের নিয়ে এসে ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়।
এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় পথচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও ট্রাকে করে পৌঁছে দেয়া হয় ইফতার।
প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরের ৩০০ থেকে ৫০০ দুস্থ ও পথচারীকে ইফতার করায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ছবি: নিউজবাংলাচট্টগ্রামে বিদ্যানন্দের এই আয়োজনের সমন্বয় করেন স্বেচ্ছাসেবক মিজানুর রহমান। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, প্রতিদিন সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার তৈরির কাজ শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এক নাগাড়ে কাজ চলে ইফতার শেষ হওয়া পর্যন্ত। ইফতার তৈরির এই কর্মযজ্ঞে স্বেচ্ছায় শ্রম দেন প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন। তাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। বিদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছেন বেশ কয়েকজন, তারা সবাই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওইমেন-এর শিক্ষার্থী। ক্লাস না থাকা সাপেক্ষে সপ্তাহের বৃহস্পতি ও শনিবার বিদ্যানন্দের ইফতার বিতরণ প্রোগ্রামে স্বেচ্ছাশ্রম দেন তারা।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমরা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ জনের জন্য ইফতার তৈরি করি। বিভিন্নভাবে এসব ইফতার দুস্থ ও পচারীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়। আমাদের উদ্যোগটা হচ্ছে সবাই মিলে বাংলাদেশ, সবাই মিলে ইফতার। মানে আমরা কে ধনী, কে গরিব সেটা চিন্তা না করে সব ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে ইফতার করি। পথচারী ও দুস্থ সবাই এক কাতারে বসে এখানে বিনামূল্যে ইফতার করেন। এ ছাড়া মূল আয়োজনের পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার আমরা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন দরিদ্রপ্রবণ এলাকায় ৩ হাজার মানুষের কাছে ইফতার পৌঁছে দিই।
‘আমাদের মেন্যুতে থাকে সাধারণত সরবত, আপেল, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, জিলাপি, মুড়ি, ডিম ইত্যাদি। এ ছাড়া সপ্তাহের দুই দিন আমরা স্পেশাল আইটেম করি। এর মধ্যে সপ্তাহের প্রতি রোববার মাটন বিরিয়ানি এবং প্রতি বুধবার চিকেন বিরিয়ানি।’
প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরের ৩০০ থেকে ৫০০ দুস্থ ও পথচারীকে ইফতার করায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ছবি: নিউজবাংলাবিদ্যানন্দের সঙ্গে ইফতার করা সত্তরোর্ধ্ব আছিয়া খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেরা অনেক ভালো। আমি আগে জানতাম না হেরা ইফতার দেয়। একটা নাতিন আছে, জিয়ের ঘরের। মাইয়াডা মারা গেছে। হের লগে থাহি। কাইলকে চনা ভাজছিল, খাইতে পারি নাই। একজনের কাছে খবর পাইয়া এইখানে আইছি, ডিম দিছে, আপেল দিছে, মুড়ি দিছে, চনা দিছে, সরবত দিছে, জিলাপি দিছে। হেরা অনেক ভালা, টাহা নেয় না।’
‘দাঁত নাই তো, আপেলটা খাইতে পারি নাই। ব্যাগে লইয়া লইছি। বাইত্তে যাইয়া গুড়ি কইরা খামু, খুই খাইতে মন চাইছে।’
স্বেচ্ছাসেবক উম্মে রিজা বলেন, ‘অনেক আগে বিদ্যানন্দে এসেছিলাম। গতকাল ফোন পেয়ে আজ আবার এসেছি, এখানে অনেক মানুষের ইফতার তৈরি ও বিতরণ হয়েছে। এরকম একটা আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’