কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল।
রোববার বিকেল ৫টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে বের হন তিনি।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিজ্ঞানের এই শিক্ষক। কী কারণে এই অভিযোগ তোলা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারছি না কী ঘটছে, স্কুলে অভ্যন্তরীণ রেষারিষ থেকেও হতে পারে, প্রাইভেট পড়ানো নিয়েও হতে পারে।’
এর আগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়া।
এ জন্য বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশ। এই সম্প্রীতির ভিত্তিতে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখানে জাত-পাতের ভেদ নেই। কেউ যদি অন্যায় করে তার শাস্তি হবে।’
হৃদয়ের জামিনের পর তার আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বলেন, ‘বিচারক পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে হৃদয় মণ্ডলের জামিন আবেদন গ্রহণ করেছেন। যে কুচক্রী মহল দেশকে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, ধর্মকে ইস্যু করে হৃদয় মণ্ডলের মতো একজন বিজ্ঞানশিক্ষককে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।’
হৃদয় মণ্ডল ক্লাসে ধর্মের কোনো অবমাননা করেননি দাবি করে তার আইনজীবী বলেন, ‘কারণ হৃদয় মণ্ডল তার কথোপকথনে বলেছেন, বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তি, ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস। কোর্টে বাদী আসাদও এ কথাই স্বীকার করেছেন।’
তিনি জানান, ২২ মার্চ তাকে গ্রেপ্তারের পরদিন আদালতে তোলা হয়। সেদিন জামিন চাইলে বিচারক আবেদন গ্রহণ করেননি। পরে ২৮ তারিখ আবারও জামিন আবেদন করা হয়। সেদিনও জামিন মেলেনি। এরপর জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করা হয়।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় হৃদয় মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হাওলাদার বলেন, ‘স্বামী জামিন পাওয়ায় আমি খুশি। আমি তাকে নিয়ে যেন নিরাপদে থাকতে পারি। আমার স্বামী যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে।’মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। এই মিছিলে বহিরাগতরা উসকানি দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তার নামে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।আসাদ শুরুতে জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মামলা করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, তিনি আসাদকে মামলা করতে বলেননি। তাকে পুলিশ মামলা করতে বলতে পারে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম (সদর সার্কেল) জানান, প্রশাসন থেকে মামলার জন্য কাউকে জোর করা হয়নি।