২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণে দেখা দেয়ার পর নিরস কেটেছিল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। সেবার প্রায় বন্ধই ছিল দোকানপাট।
গত বছরও রমজানের আগে বেড়ে যায় করোনার প্রকোপ। ফলে প্রশাসনিক বিধিনিষেধে ঈদের বেচাকেনায় পড়ে বড় প্রভাব।
চলতি বছরের শুরু থেকে কমছে করোনার প্রকোপ। করোনায় আক্রান্তের হার প্রায় শূন্যের কোটায়। স্বাভাবিক হয়ে এসেছে জনজীবন। তাই গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন এখন ব্যবসায়ীদের।
রমজানের এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরই চট্টগ্রামের বিভিন্ন শপিং মলে শুরু হয়েছে ঈদের বেচাবিক্রি।
শনিবার নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ঈদকে কেন্দ্র করে দোকানে নতুন পোশাক তুলেছেন ব্যবসায়ীরা। শপিংমল ও বিপনি বিতানগুলো সাজানো হয়েছে নতুন সাজে। আলোকসজ্জায়ও আসছে নতুনত্ব। দোকানে দোকানে বিক্রির জন্য নতুন পোশাক সাজিয়ে রাখা হয়েছে থরে থরে। ক্রেতারা গেলেও আশানুরূপ বেচাবিক্রি এখনও শুরু হয়নি বলে জানান দোকানিরা।
নগরীর ফিনলে স্কয়ার, রিয়াজুদ্দিন বাজার, আফমি প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, সানমার ওশান সিটি, বার্লি আর্কিডসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখে যায় প্রায় সবগুলো মার্কেটই ক্রেতাশূন্য। দোকানিরা বসে আছেন অনেকটা হতাশ হয়ে। একজন ক্রেতা আসলেই বিভিন্ন উপায়ে তাকে দোকানে টানার চেষ্টা করছেন সবাই।
নগরীর মিমি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. সোহাগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই বছর তো বেচা বিক্রি হয়নি খুব একটা, বরং আমাদের লস গিয়েছিল অনেক। দোকান ভাড়া, মালামাল জমাট রাখা- সব লস। কাপড় তো কাপড়ই, প্রতিদিন নতুন নতুন ড্রেস বের হয়, পুরোনো হয়ে গেলে কেউ কিনতে চায় না। গত দুই বছরে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা ৪ বছরেও কেটে উঠা যাবে না।’
নগরীর ফিনলে স্কয়ার শপিং মলের আরেক ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী বলেন, ‘ঈদকে ঘিরে বেশি বেশি নতুন কাপড় তুলছে ব্যবসায়ীরা। সবগুলো পড়ে আছে, ক্রেতা এখনো সেভাবে আসছে না। ঈদের কেনাবেচা হয় মূলত শেষ ১০ রমজানে। তবে শুরুর দিকে বেচাকেনা কম থাকলেও এখনকার মত কম থাকে না। এখন তো পুরো মার্কেটই ফাঁকা।’
তবে আফমি প্লাজার ব্যবসায়ী রুপসী কালেকশনের মালিক সরোয়ার হোসেন দাবি করেন, দিনে ও ইফতারের পর ক্রেতা কম থাকলেও মধ্যরাতের দিকে বাড়ে ক্রেতা।
তিনি বলেন, ‘মানুষ তো সারাদিন রোজা রাখে, তাই খুব কমই মার্কেটে আসে। আর ইফতারের পর রোজা রেখে সবাই রেস্ট করে। তাই মার্কেট ফাঁকা। তবে রাত ৯টা- ১০টার পর কিছু কিছু ক্রেতা মার্কেটে আসে। তখন মোটামুটি ভিড় থাকে, কিছু বেচা বিক্রি হয়।’
শনিবার সন্ধ্যায় সানমার ওশান সিটির শপিংমলে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছিলেন অক্সিজেন এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজা বাড়লেই মানুষের ভিড় বাড়বে। তখন ভিড়ের মধ্যে কেনাকাটা করা কঠিন। মেয়ারা কেনাকাটার জন্য ধরেছে, তাই তাদের নিয়ে আসা।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই বছর তো করোনা ছিল, করোনায় আমার এক নিকটাত্মীয় মারা গিয়েছিল। তাই আমরা গত দুই বছরই বের হইনি। আমরা মেয়ারা ছোট হলেও পরিস্থিতি বুঝেছে। আপনারা তো বলছেন ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেনি গত দুই বছর, আসলে শুধু সেটা না, ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেনি বলে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কাছে ঈদের আনন্দও ফিকে হয়ে গিয়েছিল। যাক আলহামদুলিল্লাহ, এবার করোনার প্রকোপ কমেছে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম জানান, চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সব উপজেলা মিলে দোকান আছে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে কাপড়ের দোকান রয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজারের মতো।
করোনার ধকল কাটিয়ে এবারের ঈদের কেনাকাটায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারবেন বলে আশা এই ব্যবসায়ী নেতার।
চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে প্রতি বছর ঈদ বাজারে গড়ে ৩৭ হাজার কোটি টাকার মত ব্যবসা হয়। গত দুই বছর করোনার কারণে এটা হয়নি৷ আশা করছি করোনার ক্ষতি ব্যবসায়ীরা এবার কাটিয়ে উঠতে পারবেন।’
নগরীর অভিজাত শপিং মলের পাশাপাশি ঈদের কেনাবেচা জমে উঠে হকার্স মার্কেটগুলোতেও।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. মিরন হোসেন মিলনের দেয়া তথ্যমতে, মহানগরে ভ্রাম্যমাণ দোকান (হকার) রয়েছে ২২ হাজারের মত। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ এসব দোকান থেকে ঈদের কেনাকাটা করেন বলে জানান তিনি।
মিরন হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে অন্য সব ব্যবসায়ীদের মতো হকাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এবার যেহেতু করোনার প্রকোপ কমে গেছে, তাই ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে আশা করছি।’