খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) এক নারী রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় রোগীর দুই ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ।
তাদের মুক্তির দাবিতে রোববার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে খুলনা মহানগরীর নতুন রাস্তা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন রোগীর স্বজনরা। এতে যান চলাচল কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। এ সময়ে তারা ঘোষণা দেন, আটক দুজনকে ছাড়া না হলে তারা মৃত ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতাল থেকে নেবেন না।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রোববার রাত ৩টার দিকে ভাঙচুর ও মারামারির ওই ঘটনা ঘটে।
মৃত নারী হলেন নগরীর দৌলতপুরের পাবলা কারিকরপাড়ার মাওলানা আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী পিয়ারুন্নেছা। আটকরা হলেন তার দুই ছেলে তরিকুল ইসলাম কাবির ও সাদ্দাম হোসেন।
ওই নারীর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
‘রাত ২টার দিকে আমার স্ত্রীর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তখন এক ছেলে গিয়ে চিকিৎসককে ডাকে। তবে কেউ না এসে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে বলেন।
‘পরে রোগী নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানালে তারা রোগীর কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেন। তখন কাগজপত্র দেখে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, রোগীর কোনো সমস্যা নেই। তার কিছুক্ষণ পরেই আমার স্ত্রী মারা যায়।’
তিনি বলেন, ‘মায়ের এমন মৃত্যুতে আমার ছেলে মো. মোস্তাকিম গিয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান, তারা কেন দেখতে এলেন না। এ নিয়ে আমার ছেলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয় চিকিৎসকের।
‘এ ঘটনায় এক চিকিৎসকের হাত কেটে যায়। পরে আমি ওই চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে তারা আমাকে মারধর করে। এ সময়ে আমার ছেলেরা চিকিৎসকদের সঙ্গে হাতাহাতি করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে আমার দুই ছেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। এ ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার স্ত্রীর লাশ আটকে রেখেছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওই রোগী শনিবার রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার তিনি একটি ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। ওই ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়ার পরও তার অবস্থা উন্নত হচ্ছিল না। পরে ক্লিনিকের চিকিৎসকদের পরামর্শে স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি সৈকত ঘোষ বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে তারা চিকিৎসককে ডাকতে এলে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক গিয়ে ওই রোগীকে চিকিৎসা দেন। ওই চিকিৎসক রোগীর কাছে থাকা অবস্থায় রোগী মারা যান। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কোনো ত্রুটি ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রোগী মারতে চাই না। একজন রোগীকে সুস্থ করতে পারলে আমরা বেশি খুশি হই। তবে ওই রোগীর স্বজনরা আমাদের এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে ইচ্ছামতো মেরেছেন।
‘বর্তমানে ডা. মনিস কান্তি দাস নামের ওই চিকিৎসক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। রোগীর ছেলেরা চিকিৎসকের রুমের চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিল। তখন রোগীর স্বজনরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এরপর পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়। আমরা কাউকে আটক করিনি। তবে বিষয়টি আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এ প্রসঙ্গে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের থানায় নিয়ে এসেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, পুলিশ রোগীর দুই স্বজনকে আটকের পর তারা মৃতের লাশ ইচ্ছা করে নেয়নি। আমরা তাদের লাশ নিতে বারবার অনুরোধ করেছি।
‘তারা দাবি করেছেন আটক দুই ছেলেকে না ছেড়ে দিলে তারা মৃতের লাশ নেবেন না। তবে তাদের আটকে আমাদের কোনো হাত নেই। পুলিশ তাদের আটক করেছে।
‘রোগীর অন্য স্বজনরা বিভিন্নভাবে আমাদের হুমকিতে রাখতে চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আটক দুজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’