রোজা শুরুর দিন রোববার প্রচণ্ড যানজট দেখেছিল রাজধানীবাসী। জটের কারণে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেরিয়েও বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারেননি অনেকে।
সপ্তাহ ঘুরে আসা রোববারে আবারও প্রচণ্ড যানজট দেখা গেছে রাজধানীতে। এতে গত সপ্তাহের মতো চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে কর্মব্যস্ত মানুষকে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাজধানীতে যানজট স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার সেটি আরও বেড়ে যায়।
আজ বাসা থেকে বেরিয়ে ঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি বিপুলসংখ্যক মানুষ। প্রচণ্ড যানজটে নাকাল হয়েছেন উত্তরা-মিরপুর-কারওয়ান বাজার-ধানমন্ডি- মোহম্মদপুর এলাকার লোকজন।
উত্তরায় প্রায় নিশ্চল যানবাহন
সকাল থেকেই গতিহীন ছিল উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে জসীম উদ্দীন পর্যন্ত সড়কে চলা যানবাহনগুলো। এটুকু রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘুরতে সময় নিয়েছে ঘণ্টারও বেশি।
এই যানজটে বসে থেকে অধিকাংশ মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। তাদের কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে ফিরে গেছেন নিজ বাসায়।
সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ওই এলাকার যানজট ছিল অসহনীয়। এরপর কিছুটা সচল হয় গাড়ির চাকা।
নাজনীন কবির নামের এক নারী বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে আগারগাঁও যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম, কিন্তু উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর থেকে জসীম উদ্দীন পর্যন্ত যেতেই দেড় ঘণ্টা লাগল। রাস্তার যা অবস্থা দেখলাম, তাতে আর যাওয়ার সাহস হলো না। তাই আবার বাসায় ফিরে এসেছি।’
আদনান ফারুক নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘গুলশানে আমার অফিস। এখন তো রমজানের জন্য অফিস আওয়ার কম। তাই ব্যাংকে চাপ থাকে বেশি। তা ছাড়া আমাদের দেরি করে অফিসে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
‘আজকে অফিসে দেরি হলো এই জ্যামের কারণেই। মাস্কট প্লাজা থেকে জসীম উদ্দীন রোড পার হয়েছি হেঁটে।’
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার বদরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত রাস্তা অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গেছে। আগে যেখানে চার লেনে গাড়ি চলত, এখন সেখানে সমপরিমাণ গাড়ি দুই লেনে চলছে। এ জন্য এখন উত্তরায় নিয়মিত যানজট থাকে। বিমানবন্দর থেকে জসীম উদ্দীন সড়কমুখে একটি পরিকল্পিত ইউলুপ ছিল, যার কারণে গাড়ির চাপ থাকলেও কোথাও কোনো ক্রসিং পড়ত না। তাই গাড়ির জট তৈরি হতো না।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আবারও নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় যানজট। ছবি: সাইফুল ইসলাম
‘সম্প্রতি বিআরটি প্রকল্পের জন্য এই ইউলুপটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে সাময়িকভাবে একটি ইউটার্ন করা হয়েছে, কিন্তু ইউলুপটি না থাকায় এখন অনেক গাড়ির জট তৈরি হচ্ছে। এতে উত্তরা এলাকায় এখন অনেক যানজট হয়, কিন্তু প্রকল্পের কাজও তো শেষ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করে যতটা সম্ভব রাস্তা সচল রাখার চেষ্টা করি। রোববার সকালে যানজট থাকলেও ১০টার পর থেকে এই এলাকার সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’
সড়কে শিক্ষার্থীদের চাপ
‘সকাল ৮টায় বাচ্চাকে ধানমন্ডিতে স্কুলে ড্রপ করেছি, ১১টায় মেয়ে স্কুল শেষ করে বাসায় ফিরছে, কিন্তু আমি এখনও উত্তরার অফিসে পৌঁছাতে পারলাম না।’
মো. সাফিউল্লাহ নাবিল তার ফেসবুকে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছিলেন রোববারের ভয়াবহ যানজটের কথা।
ফারহান নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে তো ক্যান্টনমেন্ট এলাকাটাও সুশৃঙ্খল ছিল। এখন তো এর ভেতরেও জ্যাম লেগে থাকে।’
মিরপুর ১৩ নম্বর থেকে মহাখালী যাওয়ার জন্য কচুক্ষেত হয়ে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ভেতরের সড়ক ব্যবহার করেন ফারহান, কিন্তু রোববার ‘অজানা কারণে’ মিরপুর বিআরটিএর সামনে থেকে কচুক্ষেতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার প্রবেশমুখ পর্যন্ত যানজট হয়, যা পাড়ি দিতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে ফারহানের।
এমন যানজটের কারণ জানতে চাইলে ট্রাফিক বিভাগের মিরপুর পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার মো. ইলিয়াস হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় শহীদ আনোয়ার পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের গাড়ির চাপের কারণে ক্যান্টনমেন্টের প্রবেশমুখে যানজট তৈরি হয়েছে। এটার প্রভাব এসে পড়েছে পেছনের রাস্তাগুলোতে।
‘ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে মূলত আমাদের কিছু করার নেই।’