ধর্ম অবমাননার মামলায় মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল জামিন পাওয়ার পর তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন স্ত্রী ববিতা হাওলাদার।
কারাগারে যাওয়ার ১৯ দিন পর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আক্তার ভূঁইয়ার আদালতে জামিন পাওয়ার পর রোববার দুপুরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ববিতা এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি এখন অনেক খুশি। আমি আমার হাজবেন্ড নিয়ে বাড়িতে যেন নিরাপদে থাকতে পারি রাষ্ট্রপতির কাছে এটাই চাচ্ছি। আমার হাজবেন্ড যেন নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে এটাই চাওয়া।’
মুন্সীগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০ মার্চ দশম শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করেন হৃদয় মণ্ডল। তিনি ধর্মকে একটি ‘বিশ্বাস’ এবং বিজ্ঞানকে ‘প্রমাণভিত্তিক জ্ঞান’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। গোপনে তার অডিও ধারণ করে এক শিক্ষার্থী।
ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে ওই শিক্ষকের নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ দেয়। প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জবাব দিতে বলেন। তবে এর আগেই ২২ মার্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা জোটবদ্ধ হয়ে হৃদয় মণ্ডলের শাস্তির দাবিতে স্কুলে মিছিল বের করে।
বিদ্যালয় চত্বরের পাশের রিকাবীবাজার এলাকাতেও মিছিল হয়। এই মিছিলে বহিরাগতরা উসকানি দেয় বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের খবর দেন। স্কুলে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে ভেস্তে যায় সেই আলোচনা। একপর্যায়ে হৃদয় মণ্ডলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তার নামে মামলা করেন স্কুল সহকারী মো. আসাদ।
আসাদ শুরুতে জানান, তিনি প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মামলা করেছেন। তবে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, তিনি আসাদকে মামলা করতে বলেননি। তাকে পুলিশ মামলা করতে বলতে পারে। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজ উল ইসলাম (সদর সার্কেল) জানান, প্রশাসন থেকে মামলার জন্য কাউকে জোর করা হয়নি।
হৃদয়ের জামিনের পর তার আইনজীবী শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ বলেন, ‘বিচারক পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে হৃদয় মণ্ডলের জামিন আবেদন গ্রহণ করেছেন। যে কুচক্রী মহল দেশকে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, ধর্মকে ইস্যু করে হৃদয় মণ্ডলের মতো একজন বিজ্ঞানশিক্ষককে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি।’
হৃদয় মণ্ডল ক্লাসে ধর্মের কোনো অবমাননা করেননি দাবি করে তার আইনজীবী বলেন, ‘কারণ হৃদয় মণ্ডল তার কথোপকথনে বলেছেন, বিজ্ঞান হচ্ছে যুক্তি, ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস। কোর্টে বাদী আসাদও এ কথাই স্বীকার করেছেন।’
কারাগার থেকে হৃদয়ের ছাড়া পেতে কতক্ষণ লাগতে পারে এমন প্রশ্নে আইনজীবী আমানুল্লাহ বলেন, ‘আজই আমরা জামিননামা জমা দেব। এই জামিননামা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোর পর তারা যাচাইবাছাই করবে। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ হৃদয় মণ্ডল মুক্তি পাবেন বলে আমরা আশা করছি।’