মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাঁ পা এবং কোমরের আঘাত নিয়ে গত ৫ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
তার অভিযোগ, আহত পায়ে ভর দিয়ে চলার জন্য স্ক্রাচার, হুইলচেয়ার, ওয়ার্ড বয় এবং হাইকমোড নেই মেডিক্যাল সেন্টারে। এ জন্য ভর্তির পর থেকে প্রতিদিনই তিনি নানা অসুবিধা ও অব্যবস্থাপনার শিকার হচ্ছেন।
এসব অব্যবস্থাপনা দূর করাসহ ছয় দাবিতে শনিবার দুপুর থেকে মেডিক্যাল সেন্টারটিতেই অনশন শুরু করেছেন রনি।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তুত আছি, তবুও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাব না।’
আগামী ১২ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছয় দাবি পূরণের নিশ্চয়তা এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু না করলে আমরণ অনশনেরও ঘোষণা দেন এই শিক্ষার্থী।
মেডিক্যাল সেন্টারটির অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘আমি গত কয়েক দিন যাবৎ এখানে চিকিৎসার জন্য পড়ে আছি। এখানে নেই কোনো নিয়মিত চিকিৎসাসেবা, নেই কোনো ওয়ার্ড বয়; স্ক্রাচার, হুইলচেয়ার বলতে রোগীদের জন্য এখানে কিছুই নেই। স্ক্রাচারের বদলে স্যালাইনস্টান্ড একমাত্র ভরসা আমাদের। আমার পায়ের সমস্যার কারণে লো কমোড টয়লেট ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু শতবর্ষের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে কোনো হাই কমোড নেই! ভাবা যায় এগুলো!’
মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাথরুমের জন্য আমার বন্ধুরা এসে আমাকে টিএসসিতে নিয়ে যায়। আমাকে হাই কমোডের জন্য এত বড় ভোগান্তির শিকার হতে হবে অসুস্থ না হলে জানতামই না। এটা শুধু আমার একার সমস্যা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর সমস্যা এটা।’
আক্ষেপ প্রকাশ করে ফেসবুক লাইভে এসে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এতদিন যাবৎ আমি শুনেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে এই কষ্ট, সেই কষ্ট, কিন্তু এখন প্রতিটি মুহূর্তে তা উপলব্ধি করছি। এখানে যে কত ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়, নিজে ভর্তি না হলে কোনোভাবেই বোঝা সম্ভব নয়। মারাত্মক অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে আমাদের মেডিক্যাল সেন্টার।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল মেডিক্যালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আমি একটি ভিডিও করেছি। সেই ভিডিওটি দেখে আমার হল প্রাধ্যক্ষ (বদরুজ্জামান ভূইয়া কাঞ্চন) স্যার, আমার বড় ভাইয়েরা, আমার পরিবারের সবাই আমাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাচ্ছেন। তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। কিন্তু আজ যদি আমি এখান থেকে চলে যাই, তাহলে এই মেডিক্যাল সেন্টারের পরিবর্তন আর কখনোই আসবে না। আধুনিকায়ন আর কখনোই হবে না। তাই আমি অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘শুক্রবার মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক মহোদয়ও এসেছিলেন এবং তার কাছে সব চাওয়া-পাওয়া উপস্থাপন করলে তিনি তার সীমাবদ্ধতা এবং অপ্রতুলতার কথা স্বীকার করেন।
‘কিন্তু আমি তাদের কথায় কনভিন্স হতে পারছি না। ১০০ বছর বয়স এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কমিউনিটি মেডিক্যাল সেন্টার এটা। ১০০ বছর পরও কিছুই নেই, আমাদের কিছু করার নেই। এই কথাগুলো কেন শুনতে হবে আমাদের?’
এ বিষয়ে মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ডা. হাফেজা জামান বলেন, ‘রনির সমস্যাগুলো শুনেছি। যেসব বিষয় আমার হাতে আছে সেগুলো দ্রুত করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আর বাকি বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যত দ্রুত সম্ভব করে দেয়ার কথা বলেছি। এখানে চিকিৎসকরা বসার জায়গা পান না। সেন্টারটির আধুনিকায়ন হলে তো আমাদেরই ভালো।’
মহিউদ্দিন রনির দাবিগুলো হলো
# মেডিক্যাল সেন্টারের এন্ট্রি পয়েন্টে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করা।
# প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র্যাম্প, হুইলচেয়ার ও অন্যান্য এক্সেসোরিজ প্রদান করা।
# মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্বর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সব চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করা।
# প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী ও ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বা মেশিন স্থাপন করা।
#মেডিক্যাল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যানটিন স্থাপন।
#অতিদ্রুত হাইকমোড, তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করতে হবে।