ঝিনাইদহে পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক লাইভ করেছেন ছাত্রলীগের স্থানীয় এক নেতা। এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মনির হোসেন সুমন নামে অভিযুক্ত ওই ছাত্রলীগ নেতা কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী সুমনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, শুক্রবার দুপুরে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এ সময় পরীক্ষার হলে বসেই ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি লাইভ করেন সুমন। পরে তার এই লাইভটি মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়।
ফেসবুক লাইভে সুমন বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলছে। সবাই লেখছে, আমি বসে আছি। আমি তো বাংলায় লিখিনি। সব ইংরেজিতে। আমি লিখেছি গ্রুপ কি তা আনার গ্রুপ। আমার নেতার নাম দিয়ে দিছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা চলছে। জীবনে আজ রেকর্ডধারী পরীক্ষা দিলাম। চশমাটা চোখে দিয়ে নি। না হয় ভাব বাড়ছে না পরীক্ষার হলে। আমরা তো ফাস্ট ছাত্র। ফাস্ট বেঞ্চিতে বসেছি। যাইহোক, পারি আর না পারি। আমার খাতা দেখবেন? এই দেখেন।
‘আমার খাতায় আমি লিখেছি। ইংরেজিতে মাস্টার্স করা তো। দেখেন সব ইংরেজিতে লিখেছি। সালামও লিখেছে।’
এ সময় ওরাও লিখেছে বলে অন্য শিক্ষার্থীকে দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘কি লিখিছিস তুই মনি? ওই একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে ওই পাশে। ওই যে একটা খালা। ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে লাইভ। কাকা আমরা সত্যি সত্যি পরীক্ষা দিচ্ছি।’
এরপর ফোনের ক্যামেরা খাতার দিকে ঘুরিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। আমরা ইয়ার্কি মাচ্ছি নে। আমাদের কম্পিউটার সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আমরা আছি ঝিনাইদহ পলিটেকনিক কলেজে।’
অন্য এক শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘গল্প না করে লেখ বাবা।’
এদিকে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নানা মহল থেকে নানা প্রতিক্রিয়া উঠে আসছে।
ওমর আলী সোহাগ নামে একজন তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, ‘কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ বহির্ভূত কাজ করেছে। ছাত্রলীগ মেধাবীদের সংগঠন। যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বোঝে না, ছাত্রলীগের নীতি আদর্শ মানে না। তাদের ছাত্রলীগে থাকার কোনো অধিকার নেই। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অযোগ্য, অনুপ্রবেশকারী, ছাত্রলীগের মর্যাদা রক্ষার দায় যার মধ্যে নেই তাকে অবিলম্বে ছাত্রলীগ থেকে অপসারণ করা হোক।’
এ বিষয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘আমি পরীক্ষা শেষে একটু লাইভ দিয়েছি। এটা তেমন কিছু না। একটু ভুল করেছি হয়তো। এটা নিয়ে এতো মাতামাতি করার কি আছে?’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক ইনচার্জ মাহবুব উল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষা শেষের দিকে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ফেসবুকে লাইভ করা নিয়ে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমি তো বর্তমানে কমিটিতে নেই। যদি থাকতাম এতক্ষণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতাম। তারপরও বিষয়টি নেতাদের নজরে আছে। তারা ব্যবস্থা নেবেন।’