নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও দাম সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারক, মিলার, পাইকার ও খুচরা পর্যায়ে মুনাফার যৌক্তিক হার নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স সেন্টারে শনিবার এক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এই দাবি জানান।
পবিত্র রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণবিষয়ক এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে চিটাগং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)।
সিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় চেম্বার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, আমদানিকারক, মিল মালিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ, দোকান মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আকতার হোসেন, খাতুনগঞ্জ ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ছগির আহমেদ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ এবং চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেন আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সঠিক সময়ে পণ্য বাজারে এলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সেটি নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের কাছে যৌক্তিক মুনাফা হার নির্ধারণ করে দেয়াসহ ১০ দফা দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ীদের বাকি প্রস্তাবগুলো হলো- পণ্যের সরবরাহ, মজুত ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে মিলার পর্যায় থেকে পাইকারি হয়ে খুচরা পর্যায়ে সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখতে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখা, প্রতিটি দোকানে ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্যতালিকা প্রদর্শন, পণ্য পরিবহন বাধাহীন রাখা, চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে ১৩ টন ওজনের বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সে অনুযায়ী শুল্কহার সমন্বয়, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা সমন্বয় করা, ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) ইস্যুর ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা এবং এইচএস কোড কোনো কারণে ভুল হলে উচ্চহারে জরিমানা না করে তা সংশোধনের সুযোগ রাখা।
ব্যবসায়ীদের এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, ‘চট্টগ্রাম বন্দর এবং খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার স্বাভাবিকভাবে কাজ করলে পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ চট্টগ্রামের ব্যাসায়ীরা সারা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ব্যবসায়ীরা পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখলে বাজার মনিটরিংয়ের প্রয়োজন পড়ে না।
‘বিভিন্ন নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকার পর কোনোভাবেই সরবরাহে ঘাটতি বা মূল্য বৃদ্ধি হওয়ার কারণ নেই। তা ছাড়া কোনো পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক ওঠানামা করলে সেটা ব্যবসায়ীদের জন্যই বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এখন থেকে ব্যবসায়ীদেরই বাজার স্বাভাবিক রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘সরকার কঠোরভাবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। ভোক্তা যাতে স্বস্তিতে থাকেন, সে জন্য যা করা দরকার তাই করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে রিয়েল টাইম অ্যাপস চালু করতে যাচ্ছে। শিগগিরই এর সুফল বাজারে পাওয়া যাবে। এই অ্যাপস চালু হলে বাজারের বিভিন্ন স্তরে কে কেমন আমদানি, উৎপাদন, বাজারজাত, মজুত ও সরবরাহ দিচ্ছে তার সবই অ্যাপসের মাধ্যমে সরকার জানতে পারবে। এতে বাজারে অসাধুদের অসৎ প্রবণতাও দূর হবে।’