দেশের উন্নয়ন, দর্শন নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ এইচ এম সাদাত। তিনি বলেন, ‘শুধু কি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিতে তাকাব, নাকি সার্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশকে মূল্যায়ন করব। তা এখনই ভাবনার সময়। কারণ উন্নয়ন এখন জীবনকে, অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিচ্ছে।’
মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের উদ্যোগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ‘পরিবেশ-প্রতিবেশ দূষণে হুমকিতে জনজীবন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. এ এইচ এম সাদাত বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা এমন ধরনের উন্নয়ন জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে। পরিবেশ-প্রতিবেশকে ধ্বংস করছে সেটি উন্নয়ন কি না? এসব উন্নয়ন শুধু অর্থনীতি না মানবজীবনের জন্য হুমকি তৈরি করছে কি না।’
তিনি বলেন, ‘শুধু ঢাকা বা শহরাঞ্চলের উন্নয়ন পুরো দেশের উন্নয়ন নয়। এই উন্নয়নে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করছে তাকে কীভাবে উন্নয়ন বলা যায়। অতএব উন্নয়ন হতে হবে সার্বিক কল্যাণে।’
জাবির এ শিক্ষক বলেন, ‘ঢাকায় বসবাসরতদের গড় আয়ু ৫ থেকে ৭ বছর কমে যাচ্ছে পরিবেশ দূষণে। এটি সাধারণ মানুষকে আমরা জানাতে পারিনি। পৃথিবীর ব্যালান্স নষ্ট হলে বসবাসের যোগ্যতা হারাবে। হয়তো পৃথিবী থাকবে কিন্তু কোনো প্রাণ বা প্রাণী থাকবে না।’
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, ‘আমরা পাঁচ হাজার বছর আগের বনের পরিবেশে ফিরে যেতে পারব না। তবে পরিবেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সবাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে।’
ওয়েবিনারে ডা. মনি লাল আইচ লিটু বলেন, ‘বিদ্যুৎ আবিষ্কারের আগে জীবন ছিল প্রকৃতিনির্ভর। লাইট ইমভেশনের কারণে জীবনে ডিপ্রেশন ও ম্যানিয়া দেখা দিয়েছে। ঘুম কম হচ্ছে, মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আমরা শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ, মোবাইল, তথ্যপ্রযুক্তিকে অস্বীকার করতে পারি না। তবে এসবের ভালো ব্যবহার করতে পারি।’
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ‘জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেয়া শব্দের পরিমাপ আমরা অনেক আগেই অতিক্রম করেছি। দেশের শব্দ ও বাতাসের দূষণ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে তা থেকে সহজে ফিরে আসাটা কঠিন। এ নিয়ে পথেঘাটে কাজ করতে গিয়ে আমার নিজের কানেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দুটি কানের শ্রবণ সমস্যা প্রকটাকার ধারণ করেছে।
‘ঢাকার নীরব এলাকায় দ্বিগুণের বেশি শব্দ দূষণ হচ্ছে। সাধারণ এলাকায় ৯০ শতাংশ সময়েই মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।’