করোনাভাইরাস মহামারির দুই বছরে ঈদ মৌসুমে দেশের অন্য প্রান্তের মতো মনমতো ব্যবসা করতে পারেননি রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা। মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় সাধ্যমতো পুঁজি খাটিয়ে দোকান সাজিয়েছেন তারা।
মহামারি পরবর্তী প্রায় স্বাভাবিক সময়ে লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন বিক্রেতারা, তবে দুর্মূল্যের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে টানাটানিতে থাকা লোকজন ঈদের পোশাক ক্রয়ে বিপণিবিতানে কতটা ভিড় জমাবেন, তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
ঈদের অনেক বাকি থাকলেও রাজশাহীর জামা-কাপড়ের দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে কেনাকাটা। এখন পর্যন্ত বেশি নারী ক্রেতা।
বিক্রির দিক থেকে এগিয়ে আছেন আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ওই মার্কেটে সন্তানের জন্য জামা কিনছিলেন ফারহানা ইয়াসমিন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজার শেষের দিকে অনেক চাপ হয়। সে জন্য এখনই কেনাকাটা শেষ করতে চাইছি, তবে এবারে দাম সবকিছুরই বেশি মনে হচ্ছে। সাধ আর সাধ্য মিলিয়ে কেনাকাটা শেষ করতে চাই।’
রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এবারও কম হবে কেনাকাটা।
আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী সজিব জয়সওয়াল বলেন, ‘গত দুই বছর আমাদের কোনো ব্যবসা হয়নি। এ বছর ব্যবসা করেই আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাই নতুন করে আবারও বাড়তি টাকা বিনিয়োগ করছি, তবে এবারও মনে হচ্ছে ভালো ব্যবসা হবে না।
‘কারণ অনেকের হাতেই টাকা নেই। তারপরও যা ব্যবসা হবে, তা দিয়েই আমাদের কিছু হলেও লোকসান দূর হবে।’
সিল্ক মিল লিমিটেডের পরিচালক সাজ্জাদ আলী বলেন, ‘যেহেতু গত দুই বছর আমাদের ব্যবসা খারাপ গেছে, তাই সব সেক্টরেই বাড়তি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে। ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি, ভালো কিছুই হবে আশা করছি।’
রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সেকেন্দার আলী বলেন, ‘এখন কেনাকাটার সময়। বিশেষ করে গার্মেন্টস কাপড়ের পিক টাইম। এবার ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হবে বলে আশা করছি, তবে এই বেচাকেনাতেই আগের দুই বছরের লোকসান কাটবে না। আরও সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ঈদই সব থেকে বড় ঈদ। এ ঈদে যদি আগের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ না পূরণ করতে পারে তবে ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে বেশ বেগ পেতে হবে।
‘এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সাহায্য দরকার। তারা যাতে হুটহাট করে অভিযান না দেয়। এতে করে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হয়।’
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, ‘এবার ব্যবসা ভালো হওয়ার কথা, কিন্তু সবকিছুর দাম বেশি। এখন মানুষ নিত্যপণ্য কিনবে না শৌখিনতার জিনিস কিনবে, এটা একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এখন ৯০ টাকার তেল ১৬০ টাকা। রোজা রাখলেও এগুলো লাগে। এখন মানুষ কতটুকু ঈদের বাজার করতে পারবে, সেটি একটি চিন্তার বিষয়। সব মিলিয়ে কী হবে, সেটি এখনই বলা মুশকিল।’