বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অভাবে চিকিৎসাহীন মা, মেডিক্যালে চান্স কন্যার

  •    
  • ৯ এপ্রিল, ২০২২ ০১:১২

হারিসা বলেন, ‘২০১৪ সালে আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঠিকমতো তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তখন থেকেই মনে স্বপ্ন পুষেছিলাম পড়াশোনা করে ডাক্তার হব। দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে সেবা দেব।’

হারিসা যখন স্কুলে পড়ে তখন থেকেই গুরুতর অসুস্থ তার মা রাজিয়া বেগম। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। কিন্তু ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা হারিসার বাবার সেই সামর্থ্য কি আছে?

মায়ের অসুস্থতা আর বাবার সামর্থ্যহীনতা দেখে সেই ছোটবেলায়ই জেদ ধরলেন হারিসা। বড় হয়ে যে করেই হোক, ডাক্তার হবেন তিনি। করবেন মায়ের চিকিৎসা।

সেদিনের সেই হারিসার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সত্যিই সফল হতে চলেছে। এবারের পরীক্ষায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে গেছেন তিনি।

বরিশালের বানারীপাড়ায় বসবাস করে সাদিয়া আফরিন হারিসার পরিবার। চার বোনের মধ্যে হারিসা তৃতীয়। মা গৃ‌হিণী।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নপত্রে হারিসা পেয়েছেন ৭৮ নম্বর। সব মিলিয়ে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৭৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।

বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন হারিসা। এর আগে পিএসসি পরীক্ষায় বানারীপাড়া উপজেলায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি।

পড়াশোনার বাইরেও হারিসার মেধা প্রকাশিত হয়েছে একাধিকবার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিক গল্প বলায় প্রথম স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রপতি পদক পান। ২০১৭ সালে একই প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় হন উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায়।

হারিসা বলেন, ‘২০১৪ সালে আমার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঠিকমতো তার চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তখন থেকেই মনে স্বপ্ন পুষেছিলাম পড়াশোনা করে ডাক্তার হব। দরিদ্র রোগীদের বিনা মূল্যে সেবা দেব।’

হারিসা জানান, টিউশনি করে তিনি মেডিক্যালে ভর্তির কোচিং করার জন্য টাকা জমিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘যেটুকু পড়াশোনা করতাম, তা বুঝে-শুনে করতাম। মুখস্থ বিদ্যার ওপর ভর করিনি।’

হারিসার মা রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে কত কষ্ট করে পড়ালেখা করে মেডিক্যালে চান্স পেল। কিন্তু এখন মেয়ের পড়াশোনার খরচ কিভাবে জোগাড় করব? আমার তো চিন্তা আরও বেড়ে গেল।’

হারিসার বাবা মিজানুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হারিসা পড়াশোনার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী। আমি গরিব, ওর পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট টাকা-পয়সা খরচ করতে পারিনি। হারিসা নিজের চেষ্টায় সাফল্য পেয়েছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, সে যেন একজন মানবিক চিকিৎসক হয়ে গরিবের সেবা করে।

হারিসার পড়াশোনার খরচ নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তা থাকলেও তার সাফল্যে খু‌শি বানারীপাড়ার বা‌সিন্দা ও শিক্ষকরা। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

এ বিভাগের আরো খবর