বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাতে ভাইভার নম্বর, অনৈতিক সুবিধা ‘আদায়’ শিক্ষকের

  •    
  • ৮ এপ্রিল, ২০২২ ২২:২৪

নিউজবাংলার হাতে আসা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, শিক্ষক অমরচন্দ্র কলেজের বিপরিতে একটি বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করছেন।

বরগুনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্রের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

হাতে ইনকোর্স ও ভাইভার নম্বর থাকায় শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করাসহ তাদের দিয়ে বাজার করানোরও অভিযোগ উঠেছে অমরচন্দ্রের বিরুদ্ধে।

বুধবার ওই কলেজের বাংলা বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র এনামুল হক শিক্ষক অমর চন্দ্রের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বাংলা বিভাগের শিক্ষক অমর দাসের কাছে গোটা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা জিম্মি। তার হাতে থাকা ভাইভা ও ইনকোর্সের নম্বর থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে নানা অনৈতিক আবদার করেন তিনি।

বিশেষ করে, ভাইভায় মার্কস দেয়ার জন্য তিনি অর্থও দাবি করেন। গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের কেউ টাকা না দিলে তাকে সর্বনিম্ন নম্বর দেয়ার ভয় দেখান। একইভাবে ফুল মার্কস দেয়ার কথা বলে তিনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে বাজার করানোসহ জামা-কাপড় কিনে দেয়ারও আবদার করেছেন।

এনামুল বলেন, ‘স্যার আমাদের বিভিন্ন সময়ে তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। ভাইবার ও ইনকোর্স নম্বরের দোহাই দিয়ে আমার কাছ থেকেও তিনি একাধিকবার ইলিশ মাছ, কৈ মাছ, দেশি মুরগিসহ বাজার সওদা করিয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি কলেজের ভেতরে যে কক্ষটিতে থাকেন, ওই কক্ষের খাট ভেঙে যাওয়ায় গভীর রাতে ডেকে নিয়ে খাট মেরামত পর্যন্ত করিয়েছেন।’

এদিকে, নিউজবাংলার হাতে আসা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, শিক্ষক অমরচন্দ্র কলেজের বিপরিতে একটি বাসায় প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ওই ছাত্রী বেঞ্চ থেকে উঠে পেছনের দিকে গিয়ে বসেন। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে ক্লাস চলার সময়ও এক ছাত্রীর শরীর স্পর্শ করার চেষ্টা করছেন ওই শিক্ষক।

এ ছাড়া এক ছাত্রী ওই শিক্ষকের এমন আচরণের বিষয়ে সহপাঠির সঙ্গে কথোপথনেরও একটি কল রেকর্ড আছে।

এক ছাত্রকে মাছ ও খাসির মাংস কিনে নিয়ে আসার কয়েকটি কল রেকর্ড নিউজবাংলার কাছে পাঠিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ভিডিও দেখে ওই কলেজেরই বাংলা বিভাগের সরহারী অধ্যাপক শিরীন সুলতানা নিশ্চিত করেন, ওই ব্যক্তিটি বিভাগীয় প্রধান অমর চন্দ্র।

শিরীন বলেন, ‘আমার কাছেও স্যারের এমন আপত্তিকর আচরণের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছিল। কিন্তু ছাত্রীদের জিজ্ঞেস করলে তারা ব্যপারটি চেপে গিয়েছিল।’

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের এক ছাত্রী দাবি করেন, তিন-চার মাস আগে বৃষ্টির মধ্যে একদিন প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলেন তিনি। এ সময় পেছনের বেঞ্চে বসায় স্যার তাকে ডেকে সামনের সারিতে নিয়ে বসান এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করে অশোভন আচরণ শুরু করেন। পরে ক্ষোভ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন ওই ছাত্রী। তিনি আর কখনোই সেখানে প্রাইভেট পড়তে যাননি।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজে যোগদানের পর থেকে এভাবেই বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন অমর চন্দ্র। মার্ক কম পাবে এই ভয়ে অনেকেই তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না।

একাধিক ছাত্রী পরিচয় গোপন রেখে জানান, ইনকোর্স ও ভাইভায় ফুল মার্কস দেয়ার কথা বলে তাদেরকে ‘বিশেষ সময়’ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অমর চন্দ্র। এক ছাত্রী বলেন, ‘লজ্জায় কাউকে এসব বিষয়ে কিছু বলতেও পারি না।’

এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অমর চন্দ্র বলেন, ‘অনিয়মিত কিছু ছাত্র ভাইভা ও ইনকোর্সে ফুল মার্কস দিতে আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্ত ফলাফল অনুসারে মার্কস দেয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যে অভিযোগ করছে।’

যৌন হয়রানির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।’

এসব বিষয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর তাকে অযথা হয়রানি করলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর