রোজায় বেগুনি তৈরির হিড়িকের মধ্যে বেগুনের দামে লাফ আর নতুন কোনো তথ্য নয়। তবে প্রতি বছর ১০০ টাকা কেজি ছাড়িয়ে যাওয়া সবজিটির দর এবার কিছুটা কম।
আরও খবর হচ্ছে, প্রথম রোজার তুলনায় এখন দাম আরও খানিকটা কমেছে। রোজার প্রথম শুক্রবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুমুল চাহিদার এই সবজিটির ভালো মানেরটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে, যা প্রথম রোজায় ছিল ৮০-৯০ টাকা, কোথাও কোথাও আবার ১০০ টাকাও বিক্রি হয়েছে।
বেগুনির জন্য এই সবজির চাহিদা রোজায় তুঙ্গে থাকায় দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পেঁপে দিয়ে বেগুনির মতো করে খাদ্য বানিয়ে বিক্রি করার প্রবণতা এক দশক বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরেই দেখা যাচ্ছে।
তবে এবার নতুন এক বিষয় যুক্ত হয়েছে, সেটা হলো মিষ্টি কুমড়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, বেগুনের দাম বেশি হলে মিষ্টি কুমড়া দিয়ে ‘বেগুনি’ বানিয়ে খাওয়া যায়। তিনি সেটা খান এবং খেতে বেশ মজা লাগে।
সরকারপ্রধানের এই বক্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের আলোচনায় নতুন একটি বিষয় সংযোজিত হয়েছে। তা হলো কুমড়া দিয়ে বানালে সেটিকে বেগুনি বলা যাবে, নাকি অন্য কিছু ডাকা যাবে।
কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে ট্রোল করছেন। তারা বলছেন, জিনিসপত্রের দাম স্থিতিশীল রাখা সরকারের দায়িত্ব। সেটা তারা পারছে না। কেউ আবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, দাম বাড়ে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে। চাহিদা কম থাকলে দাম কমে আসবে।
বিজয় সরণির কলমিলতা মার্কেটের বিক্রেতা মোহাম্মদ মাসুম নিউজবাংলাকে বলেন, রোজার আগের দিন বেগুন ৮০-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছিলাম, গতকাল তা ৬০ টাকায় বিক্রি করছি। আজ আবার তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
কুমড়ার বাজারের কী চিত্র- জানতে চাইলে মাসুম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নাকি মানুষরে কুমড়ার বেগুনি খাইতে কইছে। দুই-একজন কাস্টমার কুমড়া কিনছেও। দাম কিন্তু আগের মতোই আছে। প্রতি কেজি কুমড়া ২৫ টাকা।’
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ছোট আকারের কুমড়া নিলে দাম পড়ে কেজিতে ২০ টাকা করে। কিন্তু বড় কুমড়া হলে দাম একটু বেশি, কেজি ২৫ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেহেতু কইছে কুমড়ার বেগুনি খাওন যায়, বেগুনের দাম আরও বাড়লে মানুষ হয়তো কুমড়ার বেগুনি খাইতেও পারে। তখন চাহিদাও বাড়তে পারে, দামও।’
চট্টগ্রামের অক্সিজেন, কর্ণফুলী, কাজীর দেউড়ি, চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বেশ কিছু কাঁচা বাজারের চিত্র বলছে, গত সপ্তাহে মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও দাম ১০ টাকা বেড়ে শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
বেগুন রমজানের শুরুতে কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার দাম ১০ টাকা কমে গেছে।
অক্সিজেন এলাকার সবজি ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোজার দুই সপ্তাহ আগেও ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বেগুন বিক্রি করেছি। সেটা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছিল। আবার ৬০ টাকায় নেমেছে।’
তিনি বলেন, ‘রোজায় তো বেগুনি তৈরিতে অতিরিক্ত বেগুন লাগে, তাই দাম বেশি। সবাই ব্যবসায়ীদের দোষ দিচ্ছে। তবে আমরা খুচরা ব্যবসায়ী, আমাদের কী দোষ? আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
লেবুর দামও কমেছে
রোজার প্রথম দিন চড়ে যাওয়া লেবুর দর অনেকটাই কমেছে। কারওয়ান বাজারে ছোট আকারের লেবুর হালি ১৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০, ২৫, ৩০, এমনকি আকারে বড় লেবু ৪০ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে।
রোজার প্রথম দিন হালিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দাম ছিল।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা শাহজাহান জানান, টম্যাটোর কেজি বিক্রি করছেন ২৫ টাকায়। বলেন, ‘অন্যবার তো রোজায় টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বেচছি, ১০০ টাকাও হইছিল। এবার একেবারেই দাম কম।
‘শসার কেজি ৫০ টাকা, গাজর ৩৫ টাকা।’
কলমিলতা বাজারে টমেটো ৩০ টাকা, গাজর ৪০, পেঁপে ৩৫ ও আলু ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামেও এই সপ্তাহে ৩ থেকে ৫ টাকা কমেছে ঢেঁড়স, শসা, গাজর, চিচিঙ্গাসহ কয়েকটি সবজির দাম। প্রতি কেজি ঢেঁড়স ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় ও শসা আকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ
বাড্ডা এলাকায় ভ্যানে করে পেঁয়াজ বিক্রি করেন আব্দুস সালাম। প্রতি চার কেজি বিক্রি করছেন ১০০ টাকায়। বলেন, পেঁয়াজের দাম আগের চাইতে কমছে। একেবারে শুকনা পেঁয়াজ। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ বেশি, তাই দামও কম।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ ছোটগুলা ৯০ টাকা। আর বাছা (বাছাই করা) নিলে ১০০ টাকা।
‘বাজারে ম্যালা দেশি পেঁয়াজ, ইন্ডিয়ানেরও অভাব নাই, তাই দাম কমেছে। আরও কিছুদিন এই দাম থাকব।’
পেঁয়াজে দাম কমলেও মরিচের দাম বেড়েছে।
কলমিলতা বাজারের মাসুম জানান, আগের সপ্তাহে মরিচ বিক্রি করেছেন ৮০ টাকা কেজি দরে, সেটি এখন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
আরেক সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দুই দিন আগেও এক পাল্লা মচির কিনছিলাম ২৪০ টাকায়। আইজ বাজারে গিয়া মরিচই পাইলাম না। দুই কেজি আনছি ১১০ টাকা কইরা। কত বেচুম কন? হঠাৎ কেন যে মরিচের দাম বাড়ল, বুঝতেই পাইরলাম না।’