ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুমাত্রার মেদানে রাস্তার পাশে একটি খাবারের দোকান চালান সিতি রোহানি। ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিনই তিন ধরনের ডোনাট, ফ্রাইড টেম্পেহ, টোফু, ব্যানানা ফ্রিটার, স্প্রিং রোল ও কারি পাফের শত শত পিস বানান এ নারী।
এসব ভাজার কাজে দিনে পাঁচ লিটার পর্যন্ত তেল লাগে সিতির, কিন্তু দেশজুড়ে চরম সংকটের মধ্যে তার মতো অনেকের জন্য এ তেল জোগাড় করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশটিতে অশোধিত পাম তেলের দামে উল্লম্ফনের পর রান্নার তেলের মূল্য বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সরকার তেলের লিটারপ্রতি দাম ১৪ হাজার রুপিয়াতে (৮৪.৩১ টাকা) বেঁধে দিয়েছে। তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক বারে সর্বোচ্চ দুই লিটার পর্যন্ত তেল কেনার বাধ্যবাধকতাও দিয়েছে।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে সিতি আল জাজিরাকে বলেন, ‘বাড়তি এক বা দুই লিটার তেল কিনতে আমাকে গোটা শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয়েছে অথবা কোথাও গিয়ে দেখতে হয়েছে, সব (তেল) বেচা হয়ে গেছে। এটা (এমন পরিস্থিতি) সবকিছুকে আরও কঠিন করে তুলেছে।’
তেলের মূল্য বেঁধে দেয়ার প্রভাবও পড়েছে ভোক্তাদের ওপর। এ বিষয়ে মেদানের স্যান্টো টমাস ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির খাদ্যপ্রযুক্তি বিভাগের লেকচারার পোসমান সিবুইয়া বলেন, রান্নার তেলে দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে পরবর্তী সময়ে সরকার সরে এলেও এর অনাকাঙ্ক্ষিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
তিনি বলেন, ‘যা ঘটেছে, তা হলো রান্নার তেল বিক্রেতারা এত কম দামে তেল বিক্রি করতে চাননি, তারা এটি মজুত করা শুরু করে।
‘প্রকৃতপক্ষে দেশজুড়েই রান্নার তেলের মজুত আছে, কিন্তু আমরা জানি না এগুলো কোথায় আছে।’
ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি পাম তেলের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ।
ইউরোপে সূর্যমুখী তেলের বড় অংশের জোগানদাতা ইউক্রেন। যুদ্ধে সূর্যমুখীর সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায় চাহিদা বেড়ে যায় পামের মতো অন্য তেলের।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবও পড়েছে পাম তেলের বাজারে। মহামারিতে মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোতে পাম তেল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এর কারণ হলো দেশগুলোতে পাম বাগানে কাজ করা অনেক শ্রমিক করোনায় মাতৃভূমিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ পাম তেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। অভ্যন্তরীণ চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি তেল উৎপাদন হয় দেশটিতে, তবে সরকারি বিধি অনুযায়ী, মোট উৎপাদিত পাম তেলের ২০ শতাংশ দেশের বাজারে রাখলেই চলে। এর মানে হলো বাকি ৮০ শতাংশ তেলই রপ্তানিযোগ্য।
এর বাইরে ইন্দোনেশিয়ার পাম বাগানগুলোর মালিকানার বিষয়টিও রয়েছে। দেশটির অলাভজনক পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়ালহির ক্যাম্পেইনার উলি আরতা সিয়াগিয়ান বলেন, ‘পাম তেলের ক্ষেত্রে বিশাল সমস্যা হলো ইন্দোনেশিয়ায় তেলের জন্য পাম উৎপাদন করে গুটিকয়েক মানুষ, সর্বোচ্চ হয়তো ২০ শতাংশ।
‘এসব মানুষ শুধু বাগানেরই মালিক নন, তারা একই সঙ্গে কারখানাসহ আনুষঙ্গিক সব অবকাঠামোর স্বত্বাধিকারী। এ কারণে পাম শিল্প ও তেলের দামের ওপর একাধিপত্য রয়েছে তাদের।’