টিপ পরায় কলেজ শিক্ষিকাকে হেনস্তা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে কনস্টেবল নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শেষ না হওয়ায় প্রতিবেদন জমা দেয়া যায়নি। তবে এই পুলিশ সদস্যের বেশ কিছু অপেশাদার আচরণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আলোচিত এই ঘটনাটি তদন্ত করে বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নাজমুল যে বিভাগে কাজ করেন, সেই ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগকে।
বিভাগটির উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে অনেকগুলো বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া ও রোজার কারণে কর্মঘণ্টা কম হওয়ায় কাজ শেষ করা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি অনেকগুলো বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর জানতে যাচাই বাছাই করেছে। এগুলো সময়সাপেক্ষ।’
তদন্তের অগ্রগতি কত দূর
এখন পর্যন্ত তদন্তে নাজমুলের ঘটনা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি অপরাধ সামনে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাজমুল ওই ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন এ বিষয়ে বাদীর অভিযোগ আর নাজমুলের বর্ণনা ছাড়া কোনো চাক্ষুষ সাক্ষী নেই। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পেলেও ঘটনাপ্রবাহ বোঝা যেত। তবে জিজ্ঞাসাবাদে নাজমুল নিজেই স্বীকার করেছেন ওই নারীর সঙ্গে খারাপ আচরণের কথা।
‘এর বাইরে রং সাইড দিয়ে মোটরসাইকেল চালানো, ডিউটিতে ঠিক সময়ে উপস্থিত না থাকা, হেলমেট না পরা, নিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোর মতো অপরাধ সামনে এসেছে। আর এসব নির্বিঘ্নে তিনি করেছেন বাহিনীর পোশাক গায়ে চড়িয়ে। তদন্তে বাহিনীর ইমেজ সংকটকেও গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’
তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ ও নাজমুলের স্বীকারোক্তির সঙ্গে অভিযোগকারীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ থাকা ঘটনার বর্ণনায় কিছুটা অমিল পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষিকার অভিযোগ ও নাজমুলের স্বীকারোক্তিতে ঘটনার অনেক বিষয়ই মিলে যাচ্ছে। শুধু ঘটনা শুরুর মুহূর্তের বর্ণনা দুই জন ভিন্ন দিচ্ছেন।
‘তাই এই বিষয়টি নাজমুলের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে বিভাগীয় বিষদ তদন্তে পরিষ্কার করা হবে। তখন নাজমুল ও ওই শিক্ষিকাকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
বিভাগীয় তদন্তে নাজমুলের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হলে বাহিনীর আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে শাস্তি নির্ধারণ করা হবে।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে নিউজবাংলার পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের উপ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, ‘আপনার মতো আমাদেরও এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন ছিল আমরা তদন্ত কমিটিকে এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর খুঁজতে বলেছি।
‘এসব উত্তরের সব ব্যাখ্যা-তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদনে উল্লেখ করবে তদন্ত কমিটি। আর প্রতিবেদন তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা হস্তান্তর করা হবে।’
ঘটনার শুরুর পরিষ্কার চিত্র পেতে কনস্টেবল নাজমুল ও কলেজ শিক্ষিকাকে মুখোমুখি করা হবে কি না- জানতে চাইলে মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে নাজমুলের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয় কি না তা জানতে। এই অল্প সময়ে দুই জনকে মুখোমুখি করা সম্ভব নয়। তবে নাজমুলের অপরাধ প্রমাণিত হলে পরে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। তখন বিষদ তদন্ত হবে। প্রয়োজনে দুইজনকে মুখোমুখি করা হতে পারে।’
গত ২ এপ্রিল সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় টিপ পরা নিয়ে পুলিশ সদস্যের দ্বারা হেনস্তা ও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তেঁজগাও কলেজের মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষিকা লতা সমাদ্দার।
অভিযোগে লতা ওই পুলিশ সদস্যের দেহের গড়ন ও মোটরসাইকেলের আংশিক নম্বর উল্লেখ করলেও তার নাম পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। এর দুইদিন পর ওই এলাকার বিভিন্ন বিপণিবিতানের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে ডিএমপির তেঁজগাও বিভাগ ও শেরেবাংলা নগর থানা।
নাজমুল প্রথমে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও সিসিটিভির ফুটেজ দেখানোর পর সব স্বীকার করে নেন বলে জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
এরপর নাজমুলের অপরাধ তদন্তে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগ থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
শিক্ষিকার করা সাধারণ ডায়েরির ঘটনার তদন্ত করছে শেরেবাংলা নগর থানা। সেই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়নি।