বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে নগদ টাকার টান, চাপ বেড়েছে কলমানিতে

  •    
  • ৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৫০

দীর্ঘদিন করোনা থাকায় বিনিয়োগে মন্দা ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি ফিরেছে। ফলে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে।  

ব্যাংকগুলোতে হঠাৎ নগদ অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে হঠাৎ চড়েছে কলমানির সুদ হার। সম্প্রতি কলমানির সুদ হার ৫ শতাংশের উপরে ওঠে।

তবে এ সুদেও টাকা পায়নি বেশ কয়েকটি ব্যাংক, যারা দৈনন্দিন লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন করোনা থাকায় বিনিয়োগে মন্দা ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি ফিরেছে। ফলে নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। আর গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো কলমানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও দ্বারস্থ হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত তিন দিনে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর মধ্যে ৪ এপ্রিল সাত ব্যাংকে ১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, ৩ এপ্রিল চারটি ব্যাংকে ৯৭৭ কোটি টাকা এবং ৩১ মার্চ ৩টি ব্যাংকে ৯২৬ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকাররা জানান, বর্তমানে অনেক ব্যাংক আমানতে সরকারের বেঁধে দেয়া সুদহার কার্যকর করতে পারছে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর আমানতও কমেছে। কিন্তু ঋণের পরিমাণ কমছে না। কিন্তু আমানতে ও ঋণের বিপররীতে ব্যাংকগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ এডিআর (ঋণ-আমানত রেশিও) ও এসএলআর (বিধিবদ্ধ সংরক্ষণের হার) সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

আর চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কম থাকায় দেশে আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোকে নগদ অর্থ দিয়ে ডলার কিনতে হচ্ছে। রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কল মানি রেট বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ১৪ লাখ ৯ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেটা কমে ১৪ লাখ ১ হাজার ৭৫৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ৭৫ হাজার ৮৮৭ কোটি বা দশমিক ৫৪ শতাংশ।

আমানত কমার ফলে কমছে ব্যাংকের তারল্য। ২০২১ সালের জুনে ব্যাংক খাতে তারল্য ছিল ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা টাকা। বর্তমানে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ তারল্য কমেছে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম। একই সঙ্গে রেমিটেন্স প্রবাহও কম। ব্যাংক খাতে নগদ টাকা রয়েছে কিন্তু বাজারে চাহিদা আরও বেশি। এসব কারণে কল মানিতে লেনদেন বেড়েছে। কলমানি মার্কেটে চাপ বেড়ে যাওয়ায় সুদহার বাড়ছে।’

তবে এটা ঈদের আগেই অনেকটা কেটে যাবে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ঈদের আগে রেমিট্যান্স বাড়বে। আমদানি ব্যয়ও কমে যাবে।

সংকটের সময় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে, আবার ব্যাংক থেকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে টাকা ধার নেয়। সাধারণত এক রাতের জন্য এই ধার নেওয়া হয়। এই ধার দেওয়া-নেওয়া কার্যক্রম যে ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয় তা আন্তঃব্যাংক কলমানি বাজার নামে পরিচিত।

কলমানিতে ধার বেড়েছে

নগদ টাকার ঘাটতি থাকায় আন্তঃব্যাংক কলমানি বাজার থেকে নিয়মিত ধার করছে ব্যাংকগুলো।

বুধবার একদিনের জন্য কলমানি মার্কেট থেকে ৮ হাজার ১২২ কোটি টাকা ধার দেওয়া-নেওয়া করেছে ব্যাংকগুলো। এই ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এ ছাড়া চার দিনের জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ১৩০ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো।

৫ দিনের জন্য ২০০ কোটি টাকা, ৬ দিনের জন্য ১৯৫ কোটি টাকা, ৭ দিনের জন্য ৩০২ কোটি টাকা এবং ১৪ দিনের জন্য ১৪ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো। এর সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ ছিল ১৪ দিনের কলমানির লেনদেনে।

কলমানির সুদ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে কল মানি মার্কেটের সুদ ছিল ১ দশমিক ৭৮ টাকা। এর পর মে মাসে কিছুটা বেড়ে ২ দশমিক ৮ টাকা হয়। জুনে সেটা আরও বেড়ে ২ দশমিক ২৫ টাকায় ওঠে।

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সুদ হার কমে যায়। তবে নভেম্বরের কলমানির সুদ ৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। সুদ হার হয় ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে সেটা সামান্য কমে হয় ৩ দশমিক ১৬ টাকা।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট না থাকায় কলমানি সুদ আবার কমে ২ দশমিক ৪৩ শতাংশে নেমে যায়।

এর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে সেটা বেড়ে হয় ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মার্চে সেটা সামান্য কমে হয় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে রমজান শুরু হওয়ায় নগদ টাকার চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

বর্তমানে আন্তঃব্যাংক লেনদেন সুদহার সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।

ডলার চড়া, রেমিট্যান্সে নিম্নগতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ডলারের দর উর্ধ্বমুখী হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি করছে। ফলে অনেক টাকা বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে। ২৩ মার্চ প্রথমবারের মতো আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রতি ডলার ৮৬ দশমিক ২ টাকায় পৌঁছেছিল।

ডলারের দর নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) প্রায় ৪১৩ কোটি ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ ছাড়াও, কোভিড-১৯ সংকট কমার পর প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছে, যার ফলে ব্যাংকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিয়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার, যা আগের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।

গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৫২ শতাংশ। একই সময়ে নতুন এলসি খোলার ব্যয় বেড়েছে ৪৯ শতাংশ।।

এ বিভাগের আরো খবর